তিন মাসে ক্রেডিট সুইস হারালো প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার
সংকটে থাকা সুইজারল্যান্ডের অন্যতম পুরনো ব্যাংক ক্রেডিট সুইসের মালিকানায় পরিবর্তন আসে গত মার্চে। সরকারি সমর্থনেই ডুবতে থাকা ব্যাংকটির পুনরুদ্ধার হয়। তবে, মালিকানা বদল হলেও ব্যাংকটির সংকট পুরোদমে এখনও কাটেনি। বছরের প্রথম প্রান্তিকে তারা হারিয়েছে ছয় হাজার ১০০ কোটি সুইস ফ্রাঙ্ক (সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা) বা ছয় হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের পরিমাণ সম্পদ।
সোমবার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। তারা বলছে, ব্যাংকটি থেকে গ্রাহকদের অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। খবর রয়টার্সের।
সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ক্রেডিট সুইস। সরকারি সহায়তায় ৩২৩ কোটি ডলারে ১৬৭ বছর পুরনো ব্যাংকটিকে কিনে নিয়েছে সুইজারল্যান্ডের এজি ইউবিএসজি গ্রুপের ব্যাংক ইউবিএস। একইসঙ্গে দায় নিয়েছে ব্যাংকটির ৫৪০ কোটি ডলার ক্ষতির। তবে, মালিকানা পরিবর্তনের পর নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে ইউবিএসকে।
আজ ক্রেডিট সুইস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে গ্রাহকদের অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭০০ কোটি ফ্রাঙ্কে। এ সময়ে নতুন করে সঞ্চয়ের পরিমাণ তেমন একটা বাড়েনি। ক্রেডিট সুইসের বেশিরভাগ সম্পদের বহিঃপ্রবাহ হয়েছে এটির সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে।
এক বিবৃতিতে ক্রেডিট সুইস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মার্চের শেষ নাগাদ পর্যন্ত তাদের সম্পদের পরিমাণ কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ২৫০ সুইস ফ্রাঙ্কে, যা গত বছরের একই সময়ের থেকে ২৯ শতাংশ কম। সম্পদের বহিঃপ্রবাহ বাড়লেও আজ পর্যন্ত সেটি আগের স্থানে ফিরতে পারেনি।
এদিকে, আজ সকালে ইউবিএস ও ক্রেডিট সুইসের শেয়ারের দাম কিছুটা কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পদের বহিঃপ্রবাহ আমাদের অনুমানের তুলনায় কম। আমরা আরও অনেক খারাপ কিছুর শঙ্কায় ছিলাম।
লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কেবিডাব্লিউয়ের অর্থনৈতিক বিশ্লেষক থমাস হ্যালেট বলেন, ‘ক্রেডিট সুইসের আয় বাড়াতে যে সুনাম প্রয়োজন তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন কোনো পরিকল্পনা ঘোষণা না করা পর্যন্ত এটি ডুবতেই থাকবে।’
বিশ্বের সর্বোচ্চ শক্তিশালী ৩০ ব্যাংকের মধ্যে ক্রেডিট সুইস একটি। তবে, কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপের জন্য বছরের পর বছর ধরে ক্ষতির সম্মুখীন রয়েছে ব্যাংকটি। ২০২২ সালে ব্যাংকটির ক্ষতি হয়েছে ৭৩০ কোটি ডলারের, ২০০৮ সালের পর এটিই ছিল সর্বোচ্চ।
এ ছাড়া দুদিনের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের দুই ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পর গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ক্রেডিট সুইস থেকে অর্থ তুলে নিতে থাকে গ্রাহকরা।
ক্রেডিট সুইস কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে সরকারের বিভিন্ন প্যাকেজের ৬০০ কোটি পরিশোধ ফের এক হাজার ৮০০ কোটি সুইস ফ্রাঙ্ক ধার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেই ধারের ১০০ কোটি পরিশোধ করা হয়েছে।