রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধে ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার উদ্বেগ, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান
সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন পাঁচ মার্কিন আইনপ্রণেতা।
তারা নির্বাচনের আগে একটি রাজনৈতিক দলকে ‘নিষিদ্ধ’ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেছেন, একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করলে ভোটারদের একটি বড় অংশ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে এ চিঠি দেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস, বিল হুইজেঙ্গা ও সিডনি কামলাগার-ডোভ। চিঠিতে আরও সই করেন কংগ্রেসম্যান জুলি জনসন ও টম আর সুওজি।
তাদের মধ্যে গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য এবং হুইজেঙ্গা ও মালাগার- ডোভ যথাক্রমে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য।
এদিন ‘হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির’ ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়।
চিঠিতে কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নাম না নিয়ে এসব আইনপ্রণেতা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংকটের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনের ভূমিকার প্রতি তারা সমর্থন জানালেও, একটি বড় রাজনৈতিক দলকে বাদ দেওয়া মৌলিক মানবাধিকার এবং ব্যক্তিগত অপরাধের দায়বদ্ধতার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
চিঠিতে বলা হয়, আমরা আশা করি, আপনার সরকার বা নির্বাচিত পরের সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।
সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আয়োজনে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের এ আহ্বান এমন এক সময়ে করা হয়েছে যখন চব্বিশের অভ্যুত্থান দমাতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডসহ সন্ত্রাসী কাজের অপরাধের অভিযোগে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয় দেশের অন্যতম পুরনো দলটির।
এটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকেও একই অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাও করা হয়েছে। দলের প্রধান ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন হত্যাকাণ্ডে অভিযোগে মামলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অভিযোগের মামলায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৪ সালের জানুয়ারির ভোটে নির্বাচিত দ্বাদশ সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া হয়। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। আগের নির্বাচনের দুই বছর পর আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে চব্বিশের আন্দোলন নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১,৪০০ জনকে হত্যার তথ্য তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এসব কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য ঘটনার জন্য প্রকৃত জবাবদিহি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মূল্যবোধের প্রতিফলন হওয়া উচিত; প্রতিশোধের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা নয়।
অন্তর্ভুক্তিমূলক না হওয়ায় বাংলাদেশে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না তুলে ধরে চিঠিতে তারা লেখেন, সংগঠনের স্বাধীনতার পাশাপাশি সম্মিলিত নয় বরং ব্যক্তিগত অপরাধ দায়বদ্ধতার নীতি মৌলিক মানবাধিকার। আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধী বা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বদলে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পুরোপুরি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত এসব নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে আমরা উদ্বিগ্ন।
চিঠিতে তারা বলেন, ব্যালটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের মতামত প্রকাশের সুযোগ দিতে নির্বাচন আয়োজনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি অত্যন্ত জরুরি। একইভাবে সততা, স্বচ্ছাতা ও নির্দলীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার মাধ্যমে এগুলোর ওপর আস্থা ফেরাতে সংস্কার প্রয়োজন।
তারা সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত করা বা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনরায় চালু করা এসব লক্ষ্যকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
চিঠিতে কংগ্রেসম্যানরা জোর দিয়ে বলেন, একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারবে।
এ চিঠির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের বক্তব্য পাওয়া গেলে তা প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে।




