বাংলাদেশে ‘বিএনপির প্রার্থী’ হতে প্রচারে লন্ডনের দুই কাউন্সিলর, হতভম্ব ব্রিটিশ মন্ত্রী
লন্ডনের কাউন্সিলর হয়েও বাংলাদেশে সংসদ সদস্য হতে প্রচার চালিয়ে সমালোচনার মুখে পড়াদের নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী স্টিভ রিড।
স্থানীয় সরকারের অংশ হওয়ার পরও আরেক দেশের এমপি হওয়ার প্রচারে নামার খবর জেনে তিনি ‘হতভম্ব’ বলে মন্তব্য করেছেন।
আবাসন, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী স্টিভ রিড এ বিষয়ে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলকে চিঠি দিয়ে নির্বাচিত এসব জনপ্রতিনিধির বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্ট্যান্ডার্ড দিন কয়েক আগে এক প্রতিবেদনে বলেছে, টাওয়ার হ্যামলেটসের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর নিশ্চিত করেছেন, তারা আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে লড়তে মনোনয়ন চাইবেন। তারা এজন্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে অন্তত দুইজন বিএনপির হয়ে ভোটে দাঁড়াতে চান।
এ নিয়ে তারা পূর্ব লন্ডনের স্থানীয়দের সমালোচনার মুখে পড়েছেন বলেও খবরে বলা হয়।
এরপরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী স্টিভ রিড এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক কারণ গত বছর দলগুলোর নেতৃত্ব, সুশাসন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগের কারণে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে সরকারি প্রতিনিধিদের পাঠানো হয়েছিল।
তিনি লিখেছেন, এমন অবস্থায় নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের ভোটারদের স্বার্থ রক্ষা বাদ দিয়ে অন্য দেশের জন্য কাজ করতে নির্বাচিত হওয়ার প্রচার চালাচ্ছেন, যা তাকে হতবাক করেছে।
এ প্রচারণা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে রিড বলেছেন, তাদের মনোযোগ স্থানীয় টাওয়ার হ্যামলেটসের জনগণকে সাহায্য করার দিকে থাকা দরকার। কেননা প্রয়োজনীয় পরিবর্তনকে কার্যকর করতে নিবেদিত ও পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজন।
বাংলাদেশে এমপি হতে বিএনপির হয়ে মনোনয়ন চাওয়াদের একজন সাবিনা খান।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর মতো পূর্ব লন্ডনের মাইল এন্ডের বাসিন্দারাও সাবিনা খানকে এ কারণে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
সাবিনা ২০২২ সালে মাইল এন্ডে লেবার দলের হয়ে জয় পান। তবে গত বছর সেখানকার ক্ষমতাসীন অ্যাস্পায়ার পার্টিতে যোগ দেন।
কাউন্সিলের নথিপত্র অনুযায়ী, তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের টাউন হলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকলেও গত ফেব্রুয়ারি থেকে অর্ধেকেরও কম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট অনুযায়ী, তিনি বাংলাদেশে প্রচার চালাচ্ছেন।
স্ট্যান্ডার্ড লিখেছে, এমন আরেক প্রার্থী হলেন ল্যান্সবেরি ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর ওহিদ আহমেদ। তিনিও বিএনপির প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন।
নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি, নারী শিক্ষা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাটে দুর্ভোগের চিত্রও তুলে ধরেছেন।
ওহিদ আহমেদ ২০০২ সালে লেবার পার্টির হয়ে প্রথমবার কাউন্সিলর হন। পরে লুৎফুর রহমানের দলে যোগ দিয়ে ২০১৪ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস ফার্স্টে জয় পান। পরবর্তীতে ২০২২ সালে অ্যাস্পায়ার পার্টির হয়ে নির্বাচিত হন।
এরপর ২০২৪ সালে ওহিদ দল ছেড়ে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হন। ২০২৬ সালের নির্বাচনে না লড়ার কথা বলেছেন তিনি।
এছাড়া টাওয়ার হ্যামলেটসের আরও একজন কাউন্সিলর বাংলাদেশের নির্বাচনে লড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে প্রতিকবেদনে লিখেছে স্ট্যান্ডার্ড।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রথম সংসদ নির্বাচন হতে চলেছে বাংলাদেশে।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেন, কেবল অন্য কোনো দেশে নির্বাচনে দাঁড়ানো বা নির্বাচিত পদে থাকার কারণে যুক্তরাজ্যের আইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনো ব্যক্তিকে টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করে না। তবে অন্য দেশে এমন আইন থাকতে পারে, যেখানে দুই দেশের দায়িত্ব সামলানোর সুযোগ নেই।
পূর্ব লন্ডনের অফিসে বসে বাংলাদেশের এ নির্বাচনে লড়ার অভিপ্রায় এবং প্রচার চালানোকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলছে সেখানকার স্থানীয় সরকার।
‘হাউজিং, কমিউনিটিস ও লোকাল গভর্নমেন্ট’ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এই ধরনের আচরণ ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।
“আমাদের স্পষ্ট বার্তা হল কাউন্সিলররা অবশ্যই কমিউনিটির লোকদেরই কার্যকরভাবে সেবা করবে, যারা তাকে নির্বাচিত করেছে। সব কাউন্সিলরদের সততা, বস্তুনিষ্ঠতা ও জবাবদিহিতাসহ ‘নোলান মূলনীতি’ মেনে চলতে হবে।”
সাবিনা ও ওহিদ বাংলাদেশে এমপি নির্বাচিত হলে তারা কাউন্সিলর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। লন্ডনে আগামী বছর মে মাসে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে অ্যাস্পায়ার পার্টির একজন মুখপাত্র স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাংলাদেশে “এমপি নির্বাচিত হলে সাবিনা খান কাউন্সিলরের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। আগামী বছরের মে মাসে টাউন হলে স্থানীয় নির্বাচন হবে।”
ব্রিটিশ সরকার চলতি বছরের শুরুতে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্বচ্ছতার অভাব এবং ‘বিষাক্ত’ সংস্কৃতির কারণে সেখানে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বসায়।





