নাটোরে বোনের মনোনয়নে ভাইয়ের সমর্থকদের বিক্ষোভ
নাটোর-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ফারজানা শারমিন পুতুলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই আসনে ধানের শীষের দাবিদার ছিলেন তার আপন বড় ভাই ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন।
সোমবার (৪ নভেম্বর) লালপুর-বাগাতিপাড়া আসনের প্রার্থী ঘোষণার পর পরই বিক্ষোভ করেন মনোনয়ন বঞ্চিত ইয়াসির আরশাদের সমর্থকরা। সেদিন বনপাড়া-পাবনা মহাসড়কের কদমছিলান এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন রাজনের অনুসারীরা।
রাজনের এক কর্মী আবার হামলার অভিযোগ করেছেন। রাজনের সমর্থকরা মনোনয়ন বাতিলের দাবিও করেছেন। পুতুল ও রাজনের বাবা বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান পটলও এই আসনের একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে মনোনয়ন ঘোষণার দিন সন্ধার পর হামলার শিকার ছাত্রদল কর্মী জিল্লুর রহমান বলেন, ইয়াসির আরশাদ রাজনের ভাইয়ের রাজনীতি করার জন্য আমার উপর হামলা করেছেন পুতুলের সমর্থকেরা। কেন তাদের রাজনীতি করি না, রাজনের রাজনীতি করি- এটাই মূল বিষয়। তাই প্রার্থী ঘোষণার পর আমার দোকানে এসে আমার উপরে হামলা করে। তবে এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ করেননি বলেও জানান জিল্লুর রহমান।
লালপুরের যুবদল নেতা হোসাইন আহমেদ সুলভ মনে করেন, যোগ্য হিসেবে রাজনেরই মনোনয়ন পাওয়া উচিত।
লালপুর-বাগাতিপাড়া আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুর ইসলাম টিপুর সমর্থকেরাও বিক্ষোভ করছেন।
বুধবার (৬ নভেম্বর) আজিনগর স্টেশনে প্রায় আধা ঘণ্টা রেললাইনের উপরে শুয়ে-বসে অবরোধ করে রাখেন টিপুর সমর্থকরা।
তাইফুর ইসলাম টিপু বলেন, রাজনীতিতে তো আমি একা না। বাড়ি গিয়ে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত আগে জানতে হবে, দীর্ঘদিন নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন, তাদের সবার মতামত আগে দরকার। এরপর আমার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানাব। তার আগ পর্যন্ত পার্টির যে সিদ্ধান্ত সেটাই সমর্থন জানাচ্ছি।
এদিকে, মনোনয়ন পাওয়ার পর মঙ্গলবার বিকালে লালপুরে ফিরেছেন ফারজানা শারমিন পুতুল। বনপাড়া বাইপাসে বিপুল কর্মী-সমর্থকদের সংবর্ধনা গ্রহণ শেষে মিছিল নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। তার সমর্থক-অনুসারীদের আনন্দ-উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মতো।
আবুল হোসেন, মুনসের আলী, শাহনেওয়াজ পারভিনসহ ছয়-সাতজন পুতুল-সমর্থক মনে করেন, পুতুলের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করা হচ্ছে। তিনি যোগ্য হিসেবেই মনোনয়ন পেয়েছেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।
আর সব ‘চক্রান্ত’ রুখে দিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে লালপুর-বাগাতিপাড়ার উন্নয়নে কাজ করার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন ফারজানা শারমিন পুতুল।
ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুল বলেন, আমরা দুই ভাইবোনই অত্যন্ত যোগ্য। যারা বিএনপি করেছে, ধানের শীষে মনোনয়ন চাওয়ার প্রত্যেকেরই কিন্তু অধিকার আছে। রাজনীতিতে অনেক কৌশল থাকতে হয়। আমরা দুই ভাইবোন একসঙ্গে মাঠে ছিলাম, একসঙ্গেই আছি। ভাইয়ার শরীর খারাপ থাকায় আমার সঙ্গে আসতে পারেনি। মা, ভাইয়ার দোয়া নিয়েই এখানে এসেছি। ভাইয়া মনোনয়ন পেলেও একই সঙ্গে একইভাবে কাজ করতাম।
তিনি বলেন, আমাদের এক ছেলের গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি, অন্যায়কারী যেই হোক, মামলা করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে কোনো ছাড় নেই।
এসব ব্যাপারে জানতে নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য ইয়াসির আরশাদ রাজনের মোবাইলে কল করে এবং বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
নাটোর-৩ আসনে বিএনপি থেকে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করায় নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দাউদার মাহমুদকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন তার অনুসারীরা।
নাটোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, দলটা সবার, যারা মনোনয়ন পায়নি তাদের মনে তো একটু ব্যাথা আছে। যাদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তার পক্ষে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব।
একই কথা বলেন নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ।





