রোহিঙ্গা সংকটের আট বছর, জটিল হচ্ছে প্রত্যাবাসন

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আট বছর কেটে গেলেও এখনো একজন রোহিঙ্গাও নিজভূমিতে ফিরতে পারেনি। রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকান আর্মির হাতে, যা প্রত্যাবাসনের পথ আরও কঠিন করে তুলেছে।
উখিয়ার ৩ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নছিমা খাতুন বলেন, ‘খুব মনে পড়ছে দেশের কথা। রাত-দিন কান্না করি দেশে ফেরার জন্য। কিন্তু আরাকান আর্মির অত্যাচারের ভয়ে যেতে পারছি না। এখনো সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।’
গেল তিন মাস আগে মিঙ্গিঞ্জি এলাকা থেকে পালিয়ে এসে উখিয়ার ৪ নম্বর ক্যাম্পে আশ্রয় নেন নুরুল হাকিম (৫০)। তিনি বলেন, আরাকান আর্মি আমাদের দেশ দখল করে নিয়েছে। তারা দাবি করছে, আমাদের কিশোর-কিশোরি সন্তানদের তাদের কাজে নিয়োগ দিতে হবে। অস্বীকৃতি জানালে তারা রাতে এসে সন্তানদের ধরে নিয়ে যায় এবং যুদ্ধে সামনের সারিতে দাঁড় করিয়ে দেয়। প্রতিটি পরিবারের কাছে ১ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করছে।
একই ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা রশিদ উল্লাহ (৪৬) বলেন, ‘এখন আমাদের ফেরার সব পথ বন্ধ। ফিরে যেতে চাইলে আরাকান আর্মি গুলি চালাবে, অসংখ্য মানুষ মারা যাবে। বর্ধিত ৪ নম্বর ক্যাম্পের যুবক আনিছুল হক (২২) বলেন, তারা বলছে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে ফেরত নেবে। কিন্তু কোথায় রাখবে সেটা বলা হচ্ছে না। সেখানে এখনো হত্যা চলছে, তাই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘দিন দিন জটিল হচ্ছে প্রত্যাবাসন। তবে সবকিছুর পরও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক তৎপরতা, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও জাতিসংঘের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রত্যাবাসনের কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।’