গাজার বিশাল ভূখণ্ড দখলে নিয়েছে ইসরায়েল
যুদ্ধের মধ্যেই গাজার বেশ বড় একটি অংশ দখল করে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এমন দাবির সত্যতা তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ ও নরওয়েজিয়ান শরণার্থী পরিষদের বিশেষ উপদেষ্টা আইতে এপ্সটেইন।
মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, ইসরায়েল এরই মধ্যে গাজার ৫৬ বর্গকিলোমিটার ভূমি দখল করেছে। দখলকৃত এ ভূমির নাম দেয়া হয়েছে নেতজারিম টেরিটরি।
এপ্সটেইন জানান, উত্তর গাজা ও রাফাহতে একইভাবে আরও ভূমি স্থায়ীভাবে দখল করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েলি বাহিনীর। এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলার মুখে ২২ লাখ ফিলিস্তিনি খান ইউনিস এবং আল বুরেজ শহরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অথচ গাজা ভূখণ্ডের মোট আয়তন মাত্র ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটার। যা অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটিতে পরিণত করেছে।
এ সময় ইসরায়েলে কর্তৃক ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুেদ্ধ সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনে আগ্রাসনের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে। এমনকি এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি বলেও জানান এ মানবাধিকার কর্মী।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছর ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এ জন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে
গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে… দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই এ অঞ্চলের ভৌগোলিক চিত্র পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেখানে আগে পাহাড় ছিল না, এখন সেখানে পাহাড় হয়ে গেছে। দুই হাজার পাউন্ডের বোমাগুলো আক্ষরিক অর্থেই এ অঞ্চলের মানচিত্র বদলে দিয়েছে।’