‘রাতারাতি’ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ‘জাম্প’সম্ভব না: পরিবেশ উপদেষ্টা
জীবাষ্ম জ্বালানি থেকে ‘রাতারাতি’ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে লাফ দেওয়া সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ঢাকায় সামরিক জাদুঘরে বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, এখনো যখন আমাদেরকে বলে যে, বিভিন্ন জায়গায় শিল্পপতিরা, যে আমরা গ্যাস পাচ্ছি না, বিভিন্ন জায়গায়। আমার নিজের বাসাতেও তো ‘সমস্যা আমি ফেইস করছি’ কিন্তু। আপনারাও অনেকের মিরপুরে যাদের বাসা আপনারা ফেইস করছেন। এখন মানুষ গ্যাস চায়। আপনি নবায়নযোগ্য চান। এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে উত্তরণে আমাদের যেটুকুন সময় লাগবে সেটুকুন সময় আমাদেরকে দিতে হবে। সেটুকুন বিনিয়োগ আমাদেরকে করতে হবে। এটা সরকারের প্রাধিকার হিসেবেই সরকারকে নিয়ে করতে হবে। কিন্তু রাতারাতি এই ‘জাম্পটা’ করে ফেলা হয়তো সম্ভব হবে না।
‘রাতারাতি’ না করে একটা লক্ষ্য ধরে সে মোতাবেক পরিকল্পনা ও ‘বাস্তবভিত্তিক পথনকশা’ তৈরির কথা বলেন তিনি।
এর উদাহরণ তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এই দেড় বছরে মারাত্মক…শুরুর পর্যায়টা কেমন ছিল আপনারা দেখেছেন। এখন আমরা নির্বাচনমুখী হয়ে গেছি। সত্যিকার অর্থে আমরা ‘কংক্রিট’ কাজ করার সময় পেয়েছি এক বছর মতন। সেখানে আমরা নীতিতে যেটুকু পরিবর্তন আমাদের বিবেচনায় সঠিক মনে হয়েছে, অর্জনযোগ্য মনে হয়েছে আমরা সেটা করেছি। এবং সেটা করে বসে থাকি নাই, ওইটা ‘রোল আউট’ করতেছি যে সরকারকে দিয়েই আমাদের কাজটা শুরু।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন যখন সচিবালয়ে নতুন ভবনের কথা তুলি তখন সেখানে কথা হচ্ছে যে সেটাকে শতভাগ নবায়নযোগ্য করা যায় কিনা। এগুলোর জন্য যে বিনিয়োগ লাগে সেটা আমাদের সহজলভ্য কিনা।
অনেক টাকা রেখে আমাদের জন্য আগের সরকার চলে যায় নাই। এটাও একটু মনে রাখতে হবে। কিন্তু তারপরেও এগুলোকে সীমাবদ্ধতা হিসেবে দেখছি না, অতিক্রম করার চেষ্টা করছি। ‘ইটস জাস্ট গেটিং টাইম কনজিউমিং’।
অনুষ্ঠানে সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) দ্রুত সংশোধন করে তাতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের অংশীদারত্ব বাড়ানোর আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রযুক্তিগত জ্ঞান, সঠিক নীতি ও দক্ষ জনবল এই তিনটির সমন্বয় ছাড়া কার্যকর জ্বালানি রূপান্তর সম্ভব নয়। বিদেশি পরামর্শক নির্ভরতা কমিয়ে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং নীতি বাস্তবায়নে দেশীয় মালিকানা তৈরি করাই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিগত সরকারের আমলে জ্বালানি খাতে সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যার বড় একটি ছিল পলিসিগত অপরাধ। জাইকা বা বিদেশি পরামর্শকদের তৈরি মহাপরিকল্পনা কখনোই নবায়নযোগ্য জ্বালানির স্বার্থ রক্ষা করবে না। সুতরাং পরিকল্পনায় দেশি বিশেষজ্ঞদের বেশি যুক্ত করতে হবে।
জ্বালানি সম্মেলন ২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) আহ্বায়ক অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম।
আর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিডব্লিউজিইডির নির্বাহী সদস্য মনোয়ার মোস্তফা। অধ্যাপক কাজী মারুফুল আগামী নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে যেন জ্বালানি রুপান্তরের বিষয়টি সবসময় থাকে সেই বিষয়ে জোর আহ্বান জানান।





