‘দেশে ফেরা ফ্যাসিস্ট চক্রের অগ্নিসন্ত্রাস, টেলিগ্রামে নাশকতার ছক’
টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে পরিকল্পনা করে ঢাকায় অগ্নিসন্ত্রাস ও ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগসহ একাধিক নাশকতার ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা শনাক্ত করার পর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার চারজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার ডিসি মো. মাসুদ আলম এসব তথ্য জানান।
গত ৩০ অক্টোবর বিকেলে ধানমন্ডিতে ২৮ নম্বর সড়কের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউটের গলির মুখে নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। ওই সময় ধানমন্ডি থানা পুলিশ আকস্মিক অভিযান চালিয়ে দুজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— হাজারীবাগ-ধানমন্ডি এলাকার পরিচিত যুবলীগ নেতা শওকত ওসমান বাবু ও মিলন খান। গ্রেপ্তার বাবু ধানমন্ডি ২২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মিলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
পুলিশ জানায়, শওকত ওসমান বাবু দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগে কুখ্যাত। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র হামলাকারীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সরকার পতনের সময় বিদেশে পালিয়ে গেলেও সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন বহু মামলার এই আসামি। দেশে ফিরে তিনি নতুন করে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও, ককটেল বিস্ফোরণের ছবি, বাসে অগ্নিসংযোগের লাইভ ফুটেজসহ নাশকতার নির্দেশনা তার মোবাইল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকায় ১৬ নভেম্বর বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও শওকত ওসমান বাবুর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও অর্থায়নে সংঘটিত হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তার হওয়া আরেক আসামি মিলন খান নড়াইলের জয়নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা সংগঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে তদন্তে জানা গেছে। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বপন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির শেখের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। মিলন নড়াইল ও গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকার লায়ন টাওয়ারের পেছনের একটি টিনশেড বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন আর সেখান থেকেই তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা ও ঝটিকা মিছিল পরিচালনা করতেন। শওকত ও মিলনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধানমন্ডি থানা পুলিশ মঙ্গলবার আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
তাদের মধ্যে একজন হলেন তাওহিদুল ইসলাম অপু। তিনি হাজারীবাগ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান এবং যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন বাবুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। অপু স্বীকার করেছেন যে- তাদের নির্দেশে হাজারীবাগ, ধানমন্ডি ও আশপাশের এলাকায় নাশকতার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। ১৬ নভেম্বর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধে বাস পোড়ানোর ঘটনাতেও তার অংশগ্রহণের প্রমাণ স্ক্রিনশটসহ পাওয়া গেছে। শওকত বাবুর কাছ থেকে অপুর বিকাশের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণের তথ্যও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া আরেক ব্যক্তি সাব্বির শেখ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। সাব্বির মহানগর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বপনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। সাব্বির শেখ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীদের ডেকে এনে ঢাকায় নাশকতায় যুক্ত করতেন। বিভিন্ন টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয় থেকে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের নির্দেশনা দিতেন। গত ২৮ নভেম্বর ধানমন্ডিতে নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতিতেও তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। যদিও সেদিন পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ও রমনা বিভাগের টেকনিক্যাল টিম যৌথ অভিযান চালিয়ে কামরাঙ্গীরচর কোম্পানি ঘাট ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে পুলিশ ‘আস্থায় শেখ হাসিনার যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণ’, ‘দরবার হল গ্রুপ’, ‘বাঙালি বাংলাদেশ’, ‘২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’সহ বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে নাশকতার পরিকল্পনা, ককটেলের ছবি, বিস্ফোরকের তথ্য, অর্থ লেনদেনের প্রমাণ এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার ভিডিও উদ্ধার করেছে। রাজধানীর রূপনগর, হাজারীবাগ, ধানমন্ডিসহ কয়েকটি এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাতেও তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে।
ডিসি মাসুদ আলম বলেন, এই চক্রের আরও কয়েকজন সদস্যকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রমনা বিভাগের টেকনিক্যাল টিম ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহে পুরোপুরি সহযোগিতা করছে।





