আমরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি, এটা সত্য নয়: জেপির মঞ্জু
জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, আমরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি, এটা সত্য নয়। কিন্তু আরেকটু ভালো করতে পারতাম। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) নতুন জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের (এনডিএফ) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বাঙালির চরিত্রটাকে আমরা পরিবর্তন করতে পারি নাই। আমরা নাকি পরশ্রীকাতর। আমি তো সাহিত্যর লোক না। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, পরশ্রীকাতর এমন একটা শব্দ, এর কোনো বিকল্প ইংরেজি নাই; না ইংরেজি করা যায়, না উর্দু করা যায়। মানে এমন একটা জিনিস শুধু বাঙালির এই জিনিসটা আছে—আরেকজনের ভালো দেখতে পারে না। কিন্তু এটা পরশ্রীকাতরের পরিপূর্ণ অর্থ নয়। সে যাই হোক কত পরিবর্তন দেখেছি, আপনারাও দেখেছেন অনেকে, আরো দেখবেন। কিন্তু কখনো না কখনো আমাদের এই স্বাধীনতার অবমূল্যায়ন (করা ঠিক) হবে না।
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন করে আমরা কোনো ভুল করি নাই। হয়তো আমার কাছে আপনারা যা আশা করেছিলেন, সম্পূর্ণ আমি করতে পারি নাই বা আমরা পারি নাই। এর অর্থ এই নয় যে, আমরা পরাজিত—আমরা পাকিস্তান আমলে ভালো ছিলাম। এ কথা আপনি আমাকে দিয়ে বলতে পারেন না, পারবেন না।
এনডিএফ জোটের প্রধান উপদেষ্টা মঞ্জু বলেন, একটা দেশ হবে, সে দেশের মানুষ নির্ভয়ে বসবাস করবে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, ৫৪ বছরের মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, অনেক সরকার গিয়েছে, কিন্তু সবাই দেশবাসীকে ভয় দেখায়া দেশ পরিচালনা করার নীতি গ্রহণ করেছে। এটার কোনো পরিবর্তন হয় নাই। এখানে আবার দেশে যে- কিছু হয় নাই, এটাও সত্য নয়। ৫৪ বছরে আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচারে, অবকাঠামোতে যে পরিবর্তন হয়েছে; অনেক বিদেশিরা এবং দেশে যারা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ- তারা আশ্চর্য হয়ে যায়, এটা আমরা কীভাবে করলাম!
বাঙালির পরশ্রীকাতরতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে ৬৮ হাজার গ্রামের সাথে রাজধানীর সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। …গুলশানসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এত বড় বড় উচ্চ অট্টালিকা নির্মিত হয়েছে, এগুলো সব বাঙালি মালিক। অতএব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, সংগ্রাম করে আমরা ভুল করেছিলাম—এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। যদিও একথা সত্য- আমরা নিজেদেরকেই নিজে অপমান করি, আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে চোর বলি।
‘… কোন সাল থেকে শুরু করব? জিয়াউর রহমান সাহেব আসলেন, একটা পরিবর্তন, চেইন অব চেঞ্জেসের ভেতর থেকে; কী? ‘আগের সব চোর ছিল। যদিও জিয়াউর রহমান সাহেব এটা কম বলতেন। তার পরে এরশাদ সাহেব আসলেন, ‘সব চোর ছিল’। তারপরে নির্বাচন হলো, আইসা ‘সব চোর ছিল’।
এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে ১৯৯৭ সালে বের হয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের জাতীয় পার্টি-জেপির আলাদাভাবে পথচলা শুরু হয়।
সমালোচনার এক পর্যায়ে মঞ্জু বলেন, এক অত্যন্ত জ্ঞানী লোক, আমাদের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তিনি পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিচ্ছেন, ‘কী করুম? আমি সব ঠিক করে দেই, ঠিকঠাক করে থুয়ে যাই; আওয়ামী লীগ আইসে সব নষ্ট করে দিয়েছে’। আবার আওয়ামী লীগ আইসা কী বলে? ‘সব ঠিক করে দিয়েছিলাম, কিন্তু বিএনপি আইসা সব নষ্ট করে দিয়েছে’। তাহলে এগুলো কে করছে শালার বেটারা? এগুলো কে করছে, বাংলাদেশের আজকের পরিবর্তন দেখ, সমালোচনা কর। কোন সরকার নাই যে—সরকারের সমালোচনা করা যায় না। ওই ট্রাম্প সরকারেরও সমালোচনা হয়। তো সেজন্য বলি, বি পজেটিভ। আমরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি, এটা সত্য নয়। কিন্তু আরেকটু ভালো করতে পারতাম।
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট বা এনডিএফ জোটের সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা হচ্ছে যে বর্তমান অবস্থা যদি চলে… এই মব নিয়ন্ত্রিত একটা নির্বাচন আমরা দেখতে পাব। মানুষ চাচ্ছে পরিবর্তন, আপনারা পরিবর্তন দেন; মানুষ গ্রহণ করবে। আমরা যদি আবার ভুল করি, আমি আপনাদেরকে নিশ্চিত করতে পারি যেই ফ্যাসিস্ট ফ্যাসিজমের ব্যাপারে, সেই ফ্যাসিস্ট সরকারই আবার প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ নির্বাচনে গণতন্ত্রের প্রথম স্তম্ভ—নির্বাচন। যদি ঠিক না হয় ফ্যাসিজম আসবেই, কেউ বন্ধ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, আসুন আমরা সকলে মিলে এবং যেসব রাজনৈতিক দল আছেন, আমরা সকলে মিলে সরকারকে বলি—এই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য; নির্বাচন নিরপেক্ষ করার জন্য, নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য, নির্বাচনকে স্বচ্ছ করার জন্য…
‘আজকে আমার বিরুদ্ধে মামলা, আমি নাকি মার্ডার করেছি। কোনদিন? যেদিন আমি বঙ্গভবনে বসে আছি আর সেনাসদরে গিয়েছি সেইদিন নাকি; সেইদিন নাকি আমরা আমি আমার এলাকায় মার্ডার করেছি। ঢাকায় মার্ডার করেছি।’
‘সরকার, আমি কোথায় ছিলাম—পুলিশ কর্মকর্তারা জানেন না? আমি কোথায় ছিলাম, চুন্নু সাহেব কোথায় ছিলেন? হাওলাদার সাহেব কোথায় ছিলেন? আজকে এই মিথ্যা মামলা নিয়ে আমি নির্বাচন করলে, আপনি একদিকে বলবেন একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবেন; আর আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আপনি শ্রেষ্ঠ নির্বাচন করতে চান। সুতরাং এখনো সময় আছে; এই জিনিসগুলো ঠিক করেন।’
গুলশানের ইমানুয়েলস পার্টি সেন্টারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ২০ দলের সমন্বয়ে নতুন জোটের ঘোষণা দেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
জোটভুক্ত দলগুলো হলো— জাতীয় পার্টি (আনিসুল), জাতীয় পার্টি-জেপি, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জাতীয় ইসলামিক মহাজোট, জাতীয় সংস্কার জোট, বাংলাদেশ লেবারপার্টি, স্বাধীন পার্টি, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টি, অ্যাপ্লায়েড ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ।





