ঢাবিতে হলের ভিপি-জিএসের জন্য ৬ শিক্ষার্থীকে কক্ষ খালি করার নির্দেশ!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল সংসদের ভিপি বা জিএসের জন্য একটি কক্ষ খালি করতে প্রাধ্যক্ষ ছয় বৈধ শিক্ষার্থীকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন হলের ৩১৮ নম্বর কক্ষের ছয় আবাসিক শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে এ নির্দেশনা দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
কক্ষটির দুটি অংশের প্রতিটিতে রয়েছেন তিনজন করে। ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজনের সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে। তাদের তিনজনের অভিযোগ একই হলেও দুজন নাম প্রকাশ করতে চাননি।
ঘটনার বর্ণনায় আবাসিক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রিদুয়ান বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল সংসদের ভিপি-জিএসকে সিঙ্গেল রুম দেওয়ার জন্য আজ হলের প্রভোস্ট স্যার ৩১৮ এর সবাইকে ডাকেন। প্রভোস্ট স্যার বললেন, ‘তোমরা রুমে কয়জন থাক?’ আমরা বললাম, ‘ছয়জন’।
“পরে স্যার বললেন, ‘এই রুমে দুইপাশ মিলিয়ে তো ছয়জন থাকা যাবে না; তোমরা নিশ্চয়ই অবৈধ’। আমরা বললাম, ‘স্যার অবৈধ কীভাবে হয়? আমাদের সবার নাম ডেটাবেজে আছে’।”
রিদুয়ান বলতে থাকেন, “স্যার আমাদের বলেন, ৩১৮ হচ্ছে ভিপি-জিএসের রুম। এটা কোনো নিয়মে না থাকলেও এটা এই হলের কাস্টম (প্রথা)। জিনিসটা বিগত ৩০ বছরে হয় নাই, সেটা কীভাবে প্রথা হয়, তখন আমরা প্রশ্ন করলে স্যার বলেন, ‘এর আগে ডাকসু হয়েছিল, নব্বইয়ে।”
রিদুয়ানের ভাষ্য, “হল সংসদের ভিপি-জিএস প্রভোস্টের কাছে সিঙ্গেল রুমে চেয়েছে। তাই প্রভোস্ট আমাদেরকে রুম থেকে সরিয়ে তাদেরকে রুম দেওয়ার জন্য ডেকেছে।”
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ডাকসু বা হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পর নেতাদের আলাদা কক্ষ দেওয়ার নজির ছিল না। তবে ৩১৮ নম্বর কক্ষে আগে থেকেই থাকতেন তৎকালীন এজিএস সাদ্দাম হোসেন, যিনি পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন।
জানতে চাইলে স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন বলেন, “আমি আসলে অবৈধ বলেছি, বিষয়টি এমন না। তারা তিনজনের রুমে ছয়জন কেন, সেটা জিজ্ঞেস করতেই বলেছি কোনো অবৈধ ছাত্র থাকে কি না।”
শিক্ষার্থীদের কোনো ‘প্রথার’ কথা বলেছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি শুনেছি একসময় হলের ভিপি-জিএস এ রুমে থাকতেন— এরকম একটা বিষয় শুনেছি। আমি এখনো সেটার কোনো ভিত্তি পাইনি।”
ভিপি-জিএসকে আলাদা কক্ষ বরাদ্দ দেওয়ার বিধান আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন বলেন, “আলাদা বলতে এরকম না। তারা যেসব রুমে থাকে, সেগুলোতে অনেক মানুষ আসে। তাই অন্যদের সমস্যা হয়। তাই তাদের আলাদা রুম দেওয়ার কথা উঠেছে।”
কক্ষ ছাড়তে নির্দেশনা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন বলেন, “আমি তাদেরকে রুম ছাড়তে বলিনি। তারা অর্ধেক রুম চেইঞ্জ করবে কি না, জানতে চেয়েছি। প্রভোস্ট হিসেবে কাউকে ফোর্স করতে পারি না।”
হল সংসদের জিএস হাবিব উল্লাহ হাবিব বলেন, “আমরা রুম চেয়েছি, এটা অবান্তর কথা। আমরা আটজনের রুমে থাকি। তাই অন্যদের খুব ডিস্টার্ব হয়।
“সেজন্য প্রভোস্টকে রুম এক্সচেঞ্জ করতে বলেছি; তবে যারা রুমে থাকে, তাদেরকে আগে সিট দিয়ে।”
জানতে চাইলে হল সংসদের ভিপি রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা আলাদা রুম চেয়েছি— এমন না, কয়েকদিন আগে হলের অ্যালামদের একটা অনুষ্ঠান ছিল, সেখানে সিনিয়ররা বলল যে আগে এসব রুমে ভিপি-জিএসরা থাকত। তাই আমরা প্রভোস্টকে বলেছি; কাউকে বাদ দিয়ে রুম দিতে বলিনি।”




