১৬ নভেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক
দেশকে সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের গুঁটিতে পরিণত করা হয়েছে বলে মনে করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পূর্বের স্বৈরাচার সরকারের বন্দর ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমন তৎপরতার মাধ্যমে সরকার বিদেশি বিনিয়োগকেই উন্নয়ন বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছেন।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে লালদিয়ার চরে ডেনমার্কের কম্পানিকে বন্দর নির্মাণের জন্য এবং পানগাঁও টার্মিনাল সুইজারল্যান্ডের কম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে আগামী ১৬ নভেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচি সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিদাতারা হলেন, বাম জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ কাফি রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
বিবৃতিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে জাতির সঙ্গে প্রতারণা ও রাজনৈতিক দলসমূহের অনৈক্যকে বাড়িয়ে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ঠেলে দেবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে ডেনমার্কভিত্তিক মায়ার্স্ক গ্রুপের মালিকানাধীন এপিএম টার্মিনালস বিভি’র সঙ্গে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে তড়িঘড়ি করে কেন সরকার একের পর এক আমাদের লাভজনক বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে তা দেশবাসীর মনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করছে। এই ধরনের প্রকল্পে ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক নানা ঝুঁকি থাকে। দেশের নানা মহল থেকে বারবার সেই আশঙ্কা ব্যক্ত করা হলেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত করেনি।
বাম জোট নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে ভাষণে একটি বাক্যও প্রধান উপদেষ্টা উচ্চারণ করেননি। যা আমাদের হতবাক করেছে। এ যেন রোম নগরী যখন পুড়ছে সম্রাট নীরু তখন বাঁশি বাজানোর ঘটনার মতো। মব সন্ত্রাস লাগামছাড়া, নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, উগ্র মৌলবাদী তৎপরতা সমাজজীবনকে বিষিয়ে তুলছে, দিনদুপুরে ফিল্মি কায়দায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, মানুষের বেঁচে থাকার উপায়ের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে আর এই সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের গুপ্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে জনজীবনে এক চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
সরকারের গত ১৫ মাসের কর্মকাণ্ডই এই পতিত শক্তিকে জনপরিসরে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা ও ত্রুটিপূর্ণ বিচার এবং মামলা-বাণিজ্য জনমনে আশঙ্কা তৈরি করেছে এই বিচার আদৌ হবে কি? এখনো কোনো মামলার বিচার হয়নি, অথচ প্রধান উপদেষ্টা যেভাবে বলেছেন বিচার এগিয়ে যাচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের কথা বলা হয়েছে। এই গণভোট ও উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয় এবং জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবলমাত্র একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদেরই। তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করুন। দেশের বন্দরসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশি কম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থেকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো প্রতিকারে উদ্যোগ নিন।




