সমগ্র ভারতে সতর্কতা জারি
দিল্লির লাল কেল্লার কাছে একটি গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এই ঘটনার পর সমগ্র ভারতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণস্থলের নিকটবর্তী হাসপাতালে অন্তত ৩০ জন আহতের চিকিৎসা চলছে। দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র সঞ্জয় ত্যাগী বিবিসিকে জানিয়েছেন, হুন্ডাই আই-টুয়েন্টি গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে, গাড়িটিতে তিনজন ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণ এতোটাই জোরালো ছিল যে তারা কয়েক মুহূর্তের জন্য হতবাক হয়ে যান। একজন বলেন, বিস্ফোরণে তার ঘরের জানালা কেঁপে উঠে। আরেকজন দোকানদার জানান, বিস্ফোরণের পরে তিনি তিনবার পড়ে যান, তারপর নিজেকে সামলাতে সক্ষম হন।
এই ঘটনার পরপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীসহ দেশ-বিদেশের বহু নেতা শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিস্ফোরণের পর কলকাতা, মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে রাত থেকেই বাড়তি পুলিশ বাহিনী রাস্তায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। বিমানবন্দরগুলোতেও জারি করা হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। দিল্লিতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসও মার্কিন নাগরিকদের লাল কেল্লা ও চাঁদনি চক এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ দাবি করেছে, তারা উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানায় অভিযান চালিয়ে প্রায় তিন হাজার কিলোগ্রাম বিস্ফোরক, চারটি অস্ত্র এবং বেশ কিছু রাসায়নিক উদ্ধার করেছে। সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুইজন চিকিৎসক। তারা জয়েশ-এ-মুহাম্মদ ও আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, দিল্লির বিস্ফোরণের সঙ্গে এ গ্রেপ্তারের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।
রাতেই বিস্ফোরণস্থল এবং আহতদের চিকিৎসাধীন হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঘটনাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেন।
অমিত শাহ বলেন, “আমরা সব দিকই খতিয়ে দেখছি। বিস্তারিত তদন্ত হবে এবং দ্রুত ফলাফল সাধারণ মানুষের সামনে আনা হবে।” তিনি জানান, এলিট কম্যান্ডো বাহিনী ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (NSG) এবং ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ভিরু সিন্ধি বলেন, “সিগন্যাল লাল ছিল, গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎই বিস্ফোরণ হয় এবং ছয়-সাতটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। আমি নিজেও আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করতে সাহায্য করেছি।”
অটোরিকশা চালক জিশান বলেন, “আমার সামনেই গাড়িটি চলছিল—হঠাৎই তাতে বিস্ফোরণ ঘটে।” অ্যাম্বুলেন্স চালক মুহাম্মদ আসাদ জানান, “আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি কয়েকটি গাড়ি জ্বলছে, আহতরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছেন।”
স্থানীয় দোকানদার ওয়ালিউর রহমান বলেন, “বিস্ফোরণের শব্দে আমি তিনবার মাটিতে পড়ে যাই। জানালাগুলো কেঁপে ওঠে, তারপর সবাই পালাতে শুরু করে।”
স্থানীয় বাসিন্দা রাজধর পান্ডে জানান, বিস্ফোরণের সময়ে তিনি ছাদে ছিলেন। তিনি বলেন, “একটা আগুনের গোলা যেন সামনে এগিয়ে আসছিল। শব্দ এত জোরে ছিল যে আমার বাড়ির জানালাগুলোও কেঁপে ওঠে।”
বিবিসি জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে কর্তৃপক্ষ কোনো সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছে না।




