বাংলাদেশে ভোট করতে দুই কাউন্সিলরের প্রচার: টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রতিনিধিদের ডেকেছেন মন্ত্রী
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পূর্ব লন্ডনের দুই কাউন্সিলরের প্রচার নিয়ে সমালোচনার মধ্যে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বৈঠক ডেকেছেন যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী স্টিভ রিড।
গতবছর নভেম্বর সরকারের নিয়োগ করা প্রতিনিধিদের এক প্রতিবেদনে টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুৎফুর রহমানের ঘনিষ্ঠদের নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলের স্বচ্ছতার অভাব এবং ‘বিষাক্ত’ সংস্কৃতির চিত্র উঠে আসার পর সেখানে প্রশাসক দল পাঠানো হয়।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, রিড এখন তাদের কাজের অগ্রগতি জানতে চান। কাউন্সিলে যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে কি না, আর কী করা যে
তে পারে—এসব নিয়ে আলোচনা করতে প্রশাসকদের সঙ্গে বসতে চান তিনি।
লেবার পার্টির সাবেক নেতা লুৎফুর রহমান ২০১০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে নির্বাচনে জালিয়াতির দায়ে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং পরবর্তী পাঁচ বছর মেয়র পদের নির্বাচনে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়।
২০২২ সালে তিনি আবার নির্বাচিত হন ‘অ্যাসপায়ার’ দলের ব্যানারে। কাউন্সিলে অল্প ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় দলটি। এই দলের কাউন্সিলর সাবিনা খান বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নামছেন।
সাবিনা ২০২২ সালে মাইল এন্ডে লেবার দলের হয়ে জয় পান। তবে গত বছর সেখানকার ক্ষমতাসীন অ্যাস্পায়ার পার্টিতে যোগ দেন।
কাউন্সিলের নথিপত্র অনুযায়ী, তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের টাউন হলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকলেও গত ফেব্রুয়ারি থেকে অর্ধেকেরও কম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি বাংলাদেশে ভোট করার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন।
বিএনপির প্রার্থী হওয়ার জন্য ল্যান্সবেরি ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর ওহিদ আহমেদও প্রচারণা চালাচ্ছেন। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি, নারী শিক্ষা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাটে দুর্ভোগের চিত্রও তুলে ধরেছেন।
ওহিদ আহমেদ ২০০২ সালে লেবার পার্টির হয়ে প্রথমবার কাউন্সিলর হন। পরে লুৎফুর রহমানের দলে যোগ দিয়ে ২০১৪ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস ফার্স্টে জয় পান। পরবর্তীতে ২০২২ সালে অ্যাস্পায়ার পার্টির হয়ে নির্বাচিত হন।
গত বছর ওহিদ আহমেদ দল ছেড়ে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হন। ২০২৬ সালের নির্বাচনে না লড়ার কথা বলেছেন তিনি। ২০২৪ সালের অগাস্টে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রথম সংসদ নির্বাচন হতে চলেছে বাংলাদেশে।
পূর্ব লন্ডনের অফিসে বসে বাংলাদেশের এ নির্বাচনে লড়ার অভিপ্রায় এবং প্রচার চালানোকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলছে সেখানকার স্থানীয় সরকার।
ব্রিটেনের আবাসন, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী স্টিভ রিড সম্প্রতি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলকে চিঠি দিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানান। সেখানে তিনি বলেন, দুজন কাউন্সিলর বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইছেন–এই খবর শুনে তিনি বিস্মিত হয়েছেন। স্থানীয় জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য নির্বাচিত কোনো কাউন্সিলর যে অন্য দেশে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেওয়ার জন্য নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কথা ভাবতে পারেন, সেটা জেনে আমি হতবাক। বিশেষ করে আমি হতাশ, কারণ টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলররা এমন সময় এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছেন, যখন কাউন্সিল আমার প্রতিনিধি দলের সহায়তায় একটি বড় ধরনের উন্নয়ন অভিযাত্রায় রয়েছে, যা বাস্তবায়নে নিবেদিত ও সম্পৃক্ত নেতৃত্বের প্রয়োজন।
মন্ত্রণালয়ের তিনি প্রতিনিধি জুলাই মাসের প্রাথমিক অগ্রগতি প্রতিবেদনে কাউন্সিলের নেওয়া কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা বলা হলেও মেয়রের কার্যালয় থেকে ‘সহযোগিতার অভাব’ থাকার কথা বলা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মীরা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য সময় বের করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, তেমনটা সবসময় মনে হয়নি। কিছু ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সময় লেগেছে। আমরা মেয়রের অফিস ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে দেখা করতে বিশেষভাবে আগ্রহী।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা আগামী মে মাসে লন্ডনের সব কাউন্সিলের নির্বাচন হওয়ার আগেই চলতি বছরের শেষ দিকে আরেকটি প্রতিবেদন দেবেন। তার আগেই, কাজের অগ্রগতি জানতে তাদের ডেকে পাঠানোকে টাওয়ার হ্যামলেটসের পরিস্থিত নিয়ে সরকারের ‘গভীর উদ্বেগের ইঙ্গিত’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।





