‘আশুলিয়ায় ৬ জনকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর নির্দেশ দেন কয়েকজন পুলিশ’
জুলাই অভ্যুত্থানে আশুলিয়ায় শহীদদের প্রতি কিছু করতে না পারায় শহীদদের পরিবার এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন রাজসাক্ষী সাবেক এসআই শেখ আবজালুল হক। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সাবেক ওসি সায়েদের সরাসরি নির্দেশে এএসআই বিশ্বজিৎ ও অন্যান্য ইউনিট থেকে আগত পুলিশ সদস্যরা ছাতজনতাকে গুলি করে। ওসি সায়েদের নির্দেশে রক্তাক্ত লাশ প্রথমে ভ্যানে এবং পরে পুলিশের পিকআপে ওঠানো হয়।
তিনি জবানবন্দিতে বলেন, ৬ কয়েকজনকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর নির্দেশ দেন কয়েকজন পুলিশ।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় চব্বিশের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৮তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ মোট ১৬ জন আসামি রয়েছেন। অন্য দুই বিচারক হলেন— অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এ মামলায় গ্রেপ্তার থাকা আট আসামি হলেন— ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ বাকি আটজন এখনো পলাতক।
৫ নভেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজিব ২২তম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, তার সামনেই একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজলকেও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। পরে তাকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
৩০ অক্টোবর ভুক্তভোগী সানি মৃধা আদালতে সাক্ষ্য দেন। পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই নির্মম ঘটনার বর্ণনা দেন। ২৯ অক্টোবর জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে আশুলিয়া থানার এসআই মো. আশরাফুল হাসান সাক্ষ্য দেন। তিনি জানান, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল ওসির নির্দেশে রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে থানায় জমা দেন।
১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনের সাক্ষ্য দেন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান। এর আগের দিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য দেন এবং ৫ আগস্ট আশুলিয়ার বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন।
২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-২ মামলার ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। উপস্থিত আট আসামির সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করেন এবং রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান। পরবর্তীকালে তার দোষ স্বীকারোক্তির অংশ রেকর্ড করা হয় এবং রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ২ জুলাই প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে, যেখানে ৩১৩ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র, ৬২ জন সাক্ষী, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ এবং দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরবর্তী সময়ে তাদের লাশ পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুনে পোড়ানো হয়। ঘটনায় একজন তখনও জীবিত ছিলেন, কিন্তু তাকেও পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।





