যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহ পরও গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ রয়ে গেছে: ডব্লিউএইচও
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহ পরও পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর’ বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেছেন, সহায়তা সামগ্রী ঢুকলেও তা গাজাবাসীর পুষ্টিচাহিদা পূরণে ‘একেবারেই অপ্রতুল’।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো ইসরায়েলকে মানবিক সহায়তা আটকে রাখার অভিযোগ এনে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজায় প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার টন ত্রাণসামগ্রী প্রবেশের লক্ষ্য থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৭৫০ টন খাদ্য ঢুকছে, কারণ ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে থাকা মাত্র দুটি প্রবেশদ্বার—কেরেম আবু সালেম ও আল-কারারা—খোলা রয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষ এখন অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, যার মধ্যে আছেন প্রায় ১১ হাজার ৫০০ গর্ভবতী নারী। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, এই অপুষ্টির প্রভাব হবে ‘প্রজন্মব্যাপী’।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপপরিচালক অ্যান্ড্রু স্যাবারটন বলেন, “গাজায় নবজাতকদের ৭০ শতাংশই এখন অকাল জন্ম নেয় বা স্বল্প ওজনের। যুদ্ধের আগে এই হার ছিল ২০ শতাংশ।” তিনি যোগ করেন, “অপুষ্টির প্রভাব শুধু মায়ের নয়, নবজাতকের জীবনব্যাপী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে।”
গত আগস্টে গাজা শহর ও আশপাশের এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC), জানায়—অর্ধলক্ষাধিক মানুষ এখন চরম ক্ষুধা ও খাদ্যসংকটে ভুগছে।
মার্কিন মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। চুক্তির অংশ হিসেবে মানবিক সহায়তা বাড়ানোর কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। ফিলিস্তিনি এনজিও পার্কের (PARC) বাহা জাকউত বলেন, “যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহ পরও গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ রয়ে গেছে।”
তিনি জানান, “বিস্কুট, চকোলেট, সফট ড্রিংকসের মতো পণ্য ঢুকছে, কিন্তু বীজ, জলপাই বা প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী নিষিদ্ধ। ফলমূল ও শাকসবজি ঢুকলেও দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষ তা কিনতে পারছে না।”
তার ভাষায়, “যে টমেটো আগে এক শেকেলে মিলত, এখন সেটির দাম ১৫ শেকেল (প্রায় ৪ ডলার ৫০ সেন্ট)।”
বৃহস্পতিবার অক্সফাম, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলসহ ৪১টি আন্তর্জাতিক সংস্থা যৌথ বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েল ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ গাজায় ত্রাণ ঢোকা বাধাগ্রস্ত করছে। ১০ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ৯৯টি সহায়তা অনুরোধ এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর ৬টি আবেদন ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রত্যাখ্যাত সহায়তার মধ্যে ছিল তাঁবু, কম্বল, খাদ্য ও পুষ্টি সরঞ্জাম, শিশুপোশাক, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সামগ্রীসহ জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্য।
এর আগে বুধবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রায়ে বলেছে, গাজাবাসীর মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব ইসরায়েলের। গত এপ্রিলেই জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি দল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবিক সহায়তা আটকে রাখার অভিযোগ তোলে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয় অন্তত ১ হাজার ১৩৯ জন এবং ২০০ জনেরও বেশিকে অপহরণ করা হয়।




