ট্রাম্পের কঠোর ভিসানীতি, দক্ষ-মেধাবীদের মূল বিকল্প হতে পারে কানাডা
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় এইচ-১বি ভিসার ফি বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর কানাডার জন্য এক নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে- এমনটাই মনে করছেন কানাডিয়ান আইনজীবী ও ব্যবসায় বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হলে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ হারানো দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করতে পারবে কানাডা। তবে অনেকে আবার সতর্ক করে বলেছেন, বিকল্প হিসেবে কানাডাকে বেছে নেওয়া কর্মীরা দেশটির অভিবাসন ব্যবস্থার ভেতরও নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলেই ইঙ্গিত মিলেছে। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনসের এক সভায় বক্তৃতাকালে তিনি কানাডার নিজস্ব গবেষণা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রতিভার কথা উল্লেখ করেন। তবে আফসোসের সুরে বলেন, দুঃখজনকভাবে, এদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়।
গত সপ্তাহের শেষ দিকে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন এইচ-১বি ভিসা আবেদনকারীদের জন্য ১ লাখ ডলার (৭৪ হাজার পাউন্ড) ফি নির্ধারণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে বৈধভাবে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য এই ভিসার ওপর নির্ভর করে আসছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। কানাডিয়ান নাগরিকরাও এই কর্মসূচির আওতায় ভিসার জন্য আবেদন করতেন- ২০১৯ সালে মোট আবেদনকারীর মধ্যে প্রায় ১ শতাংশ ছিলেন কানাডীয়।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে যারা এইচ-১বি ভিসাধারী হিসেবে কর্মরত আছেন, তাদের ওপর নতুন নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। তবে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও এরই মধ্যে কার্যকর হওয়া এই নিয়ম দক্ষ বিদেশিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত করে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক হওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা, যারা যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার আশা করছিলেন।
কানাডাভিত্তিক অভিবাসন আইনজীবী ইভান গ্রিন বলেছেন, এটি কানাডা সরকারের জন্য এক দারুণ সুযোগ। একই মত প্রকাশ করেছে অলাভজনক সংস্থা বিল্ড কানাডা। তারা সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, শত-সহস্র দক্ষ ও উচ্চ বেতনের এইচ-১বি পেশাজীবী এখন নতুন গন্তব্য খুঁজছেন। কানাডা, তার বিশ্বমানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি অবস্থান, একই সময় অঞ্চল ও উচ্চমানের জীবনযাত্রার কারণে তাদের জন্য সবচেয়ে স্বাভাবিক গন্তব্য।
গবেষণাও দেখিয়েছে, দক্ষ কর্মীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতিতে বাধা আসলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অন্যত্র সরে যায়। ২০০৪ সালে এইচ-১বি ভিসার সীমা ৭০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার পর অনেক প্রতিষ্ঠান একই কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রের বদলে কানাডায় নিয়োগ দিয়েছিল।
এছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এইচ-১বি ভিসাধারীদের মধ্যে কানাডার প্রতি আগ্রহও দেখা গেছে। ২০২৩ সালে কানাডা সরকার যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত এই ভিসাধারীদের জন্য তিন বছরের ওয়ার্ক পারমিটের সুযোগ ঘোষণা করেছিল। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ১০ হাজার আবেদন জমা পড়ায় কর্মসূচির দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকে চূড়ান্তভাবে কানাডায় গিয়ে টিকে থাকতে পেরেছেন কিনা, তা পরিষ্কার নয়। ক্যালগেরির আইনজীবী মার্ক হোলথে জানিয়েছেন, তার কয়েকজন ক্লায়েন্ট যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নবায়ন করতে না পেরে কানাডায় চলে এসেছেন। তবে তিনি যোগ করেন, এখন অনেকেই স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে সমস্যায় পড়ছেন, যা তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করছে।
অর্থনীতিবিদ মিকাল স্কুটেরুদ সতর্ক করে বলেছেন, কানাডাকে আকর্ষণীয় গন্তব্য বানাতে হলে আরও অনেক কিছু করতে হবে। সম্ভাবনা অবশ্যই আছে, তবে সেটা অতিরঞ্জিত করা উচিত নয়- বলেছেন তিনি। তার মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডা অভিবাসন সীমিত করেছে, পাশাপাশি বিদেশি অস্থায়ী কর্মী কর্মসূচি নিয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দেশটির বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি এই কর্মসূচি বাতিলের দাবি তুলেছে।
স্কুটেরুদ আরও বলেছেন, গড়ে কানাডার বেতন কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম। ফলে প্রতিভাবান কর্মীদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে তিনি যোগ করেছেন, এইচ-১বি কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে, বিশেষ করে উচ্চপ্রযুক্তি খাতের গবেষণা ও উদ্ভাবনে। তাই কানাডারও চেষ্টা চালানো উচিত।
কানাডার ইমিগ্রেশন বিভাগ (আইআরসিসি) সরাসরি মন্তব্য না করলেও মুখপাত্র ম্যাথিউ ক্রুপোভিচ জানিয়েছেন, দক্ষ কর্মী আনার জন্য এক্সপ্রেস এন্ট্রি ও গ্লোবাল স্কিলস স্ট্র্যাটেজির মতো কর্মসূচি খোলা রয়েছে। তার ভাষায়, বিশ্বের সেরা প্রতিভাদের আকৃষ্ট করার জন্য আমরা নতুন সমাধান খুঁজে বের করতে থাকব।
সূত্র: বিবিসি




