ইউনূস ভোট করবেন কীভাবে? প্রশ্ন করতে বৈঠকে যাবেন মান্না

দেশের ‘অস্থিতিশীল’ পরিস্থিতির মধ্যে সরকার কীভাবে নির্বাচন করবে তা জিজ্ঞাসা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে যাবেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গণতন্ত্র মঞ্চের আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
মান্না বলেন, নূরের উপর হামলা হয়েছে, সরকার কী বলেছে? ‘আমরা তদন্ত করব’। তদন্ত করে তারপর বিচার হবে, আরে বাবা দেখা যাচ্ছে ভিডিও ফুটেজে, দেখা যায়নি? আপনারা দেখেননি তারা সামরিক বাহিনীতে চাকরি করে না? বা পুলিশে চাকরি করে না? তাদের সকলকে ব্যবস্থা নিতে সরকারের তদন্ত করতে হবে? আর কোনো প্রমাণের দরকার আছে? কিন্তু তারা করছে না কেন? আমার প্রশ্ন সেটা। প্রশ্ন এই জন্যে যে সামনে নির্বাচন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা দেখেছেন? কী ভয়াবহ। অন্তত হাজার দেড়েক ছাত্র আহত হয়েছে। দুইজন আহত, যেই দুইজন আইসিইউতে আছেন তারা যে কোনো সময় মারা যেতে পারেন। রাতে দুইজন ছাত্রের বাসায় প্রবেশ নিয়ে দ্বন্দ্ব, পরের দিন সারা দিন ধরে নির্যাতন করা হল।
তিনি বলেন, পুলিশ যায়নি, তারপরে রাতে আর্মি গেছে, পরের দিন প্রফেসর ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা ফোন করেছেন, তারপর আর্মি গেছে। (ধরুন) ভোটের ৫টা ১০টা সেন্টারে মাস্তান টাইপের শক্তিশালী বড় নেতা ১০টা কেন্দ্রের ভোট বাক্স নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল, পুলিশ বাধা দেবে? আপনারা বলেন, দেবে? আমার তো ভরসা হয় না। আমার থানায় আমার পার্টির প্রেসিডেন্টকে বিএনপির লোকজন ছুরি মেরেছে, হামলা করেছে। আমি সর্বোচ্চ জায়গায় অভিযোগ করেছি। মামলা করতে গেছে, পুলিশ বলে মামলা নেওয়া যাবে না, উপরের নির্দেশ আছে। আমি বলি, ভাই কত উপর আমি দেখতে চাই, সেই উপর দেখতে পাইনি। কে কাকে আটকাবে?
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেভাবে ডাকা হচ্ছে, তার সমালোচনা করে মান্না বলেন, প্রফেসর ইউনূস সভা করেছে তিনটা দলের সাথে, সেই তিনটা দলকে (বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি) কীভাবে উনি বাছাই করলেন আমি বুঝি না। আজকে আমাদের (নাগরিক ঐক্যসহ সাত দল) দাওয়াত করেছে। আমি ভাবছি যাব। কেন যাবো বলি, এই তিন দলকে ডাকবার পরে প্রফেসর ইউনূস দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবেই। আমি সভায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করব, কীভাবে নির্বাচন হবে? কোন ওয়েতে হবে? কোনো ওয়ে নাই, কোনো এলাকায় পুলিশ কারও কথা শোনে না। সরকার বলে আছে কিছু? সাদা পাথর চলে যায়, বালু চলে যায়, সরকার ঠেকাতে পারে?
তিনি বলেন,বিভিন্ন জায়গায় যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, পুলিশগুলো–আমি সব সময় বলি–হাড়ে হারামজাদা। না সমস্ত বাহিনীকে আমি গাল দিচ্ছি না। ১৫ বছর ধরে একটা নির্যাতনকারী সরকার যদি তাদের ওপরে সমস্ত অন্যায় নির্দেশ দেয়, তাকে পালন করতে বাধ্য করে, তাহলে সেই বাহিনীর অবস্থা কী হয়? মানুষ ক্ষেপে গিয়ে আন্দোলনের মধ্যে পিটাতে পিটাতে বেঁধে ফেলেছে অনেকগুলো পুলিশকে, গাছের মধ্যে ঝুলিয়ে রেখেছে। পুলিশের মধ্যে তার একটা ট্রমা আছে, ভয় পায়।তারা যেতে চায় না মানুষের সঙ্গে, গেলে আবার যদি আগের আচরণ করে। সরকারের দায়িত্ব ছিল সবার আগে পুলিশ ঠিক করা। এই যে সংস্কার নিয়ে এত কথা বলেন, লোয়ার হাউস আপার হাউস, তার আগে ঠিক করেন পুলিশ। না আমি আমার কথা বলছি না, প্রফেসর ইউনূস তো বলেছে ‘আমাদের টপ প্রায়োরিটি হল পুলিশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ঠিক করা’। আমি আজকে ১৩ মাস পরে সরকারকে জিজ্ঞেস করতে পারি, কী অবস্থা এখন পুলিশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের? পুলিশ কোন জায়গাতে দায়িত্ব পালন করছে?
মান্না বলেন, আপনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেখেন কী অবস্থা, আপনি দেখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কী অবস্থা? প্রত্যেক জায়গায় স্থানীয় লোকজনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মারামারি হয় কেন? এতগুলো বছর যারা যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের কাছে প্রশ্ন করছি না, কিন্তু এই সরকার আসবার পরে এগুলোর কোনো বিহিত করবেন না? অবাক লাগে না? রাতের বেলা প্রক্টর প্রোভাইস চ্যান্সেলর ফেইসবুকে কাঁদছে। সারাদেশের মানুষের কাছে বলছেন, ‘আমরা এত অসহায় আমাদেরকে বাঁচান’। বাঁচাতে যায়নি কেউ, তাহলে ভোটের দিনে ক্যান্ডিডেটকে ধরে পিটাতে থাকবে কেউ, ক্যান্ডিডেট কাঁপতে থাকবে, বলবে–‘ভাই আমাকে বাঁচান’, কেউ বাঁচাতে আসবে না, হতে পারে না এরকম?
তিনি বলেন, আমি প্রফেসর ইউনূসকে এগুলো বলতে চাই। উনি আমার শিক্ষক ছিলেন, আমি প্রায় সময় বলি, তার কাছে আমার অনেক ঋণ। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই পছন্দ করি, নাইস ম্যান, সৎ মানুষ এবং স্বপ্নবাজ। কিন্তু এখন সাকিব আল হাসানকে যদি ফুটবল খেলতে দিই, উনি কি কিছু করতে পারবেন? না আমাদের প্রফেসর ইউনূস বিশাল মানুষ, কিন্তু পার্টি করতে গেছেন নাগরিক শক্তি, এসএমএস করে করে পার্টি করতে শুরু করেছেন। হয়েছে? আমি তার সামনে আজকে বলব, শ্রীলঙ্কাতেও এরকম একটা অবস্থান হয়েছিল, শ্রীলঙ্কা কোন সংস্কার করে একটা ভালো নির্বাচন করেছিল? কত বড় ক্রাইসিসে পড়েছিল, বাংলাদেশ থেকে টাকা ধার নিয়েছিল, সেই টাকা ফেরত দিয়েছে। আমরা সংস্কার করছি, এই সংস্কারের তো বাস্তবে মুক্তি পেলাম না, তাহলে পুরো সময়টা নষ্ট করে দিলাম আমরা। এত বড় সম্ভাবনার সময় নষ্ট হয়ে যাবে?
বিএনপির সমালোচনা করে মান্না বলেন, ভালো নির্বাচন সবচাইতে বেশি দরকার কার? কোন দলের? বিএনপির। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করেন–যা কথাবার্তা আপনাদের নামে শোনা যায়, যে অভিযোগ আপনাদের নামে শোনা যায়, এই অভিযোগগুলো বন্ধ করবার ব্যবস্থা করেন। ৩ হাজার বহিষ্কার করেছেন না ৪ হাজার বহিষ্কার করেছেন, এর রেজাল্ট কী? আজকে মানুষ নিরাপত্তা চায়। যদি একটা দুটা বড় দল বলে যে, ‘প্রফেসর ইউনূস আপনার অত বড় দুশ্চিন্তা করবার কোনো কারণ নেই, আমরা আছি নির্বাচন যাতে ভালো হয়, সবার কাছে প্রহযোগ্য হয়, সেই দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। দায় আপনাদের, নিতে হবে সেই দায়। আর প্রফেসরকে আমি বলি, ওইরকম করে আপনার দৃঢ়তা দেখার কোনো দরকার নাই।
নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচন হবে? আরে আপনি বললে তো হবে না। আপনি বললে তো পাথর আটকাতে পারেন না। আপনি বললে বালু আটকাতে পারেন না। আপনি বললে মেয়ের ধর্ষণ আটকাতে পারেন না। কারণ আপনি যে গভার্নমেন্ট চালান, সেই গভার্নমেন্ট সম্পর্কে আপনি পরিপূর্ণভাবে জানেনও না। তার উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ নাই। কিন্তু আপনি এটা করতে পারতেন। এই আলাদা করে তিন দল আলাদা করে সাত দলকে ডাকার চাইতে একবারে সমস্ত দলকে ডাকতেন। ডেকে বলতেন যে এইটা হল বাংলাদেশের চিত্র। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা যে-রকম, ভোটের শঙ্কা, যেরকম বিপদ তিনি মনে করছেন এবং তিনি বলবেন যে ‘আমি চাই আপনারা আমাকে সাহায্য করেন যাতে এই ভোট আমি পার করতে পারি’। একা একা করতে পারবেন না। যদি নির্বাচন ঠিক মত করতে না পারেন, তাহলে দেশে অন্ধকারের অমানিশা নেমে আসবে।’