সীমান্তে উত্তপ্ত থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া, ‘অবিলম্বে’ অস্ত্রবিরতির আহ্বান নম পেনের

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ পরিস্থিতিতে ‘অবিলম্বে’ ও ‘শর্তহীন’ অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে কম্বোডিয়া।
জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ছেয়া কিও এক বিবৃতিতে বলেন, “নম পেন বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।” তবে থাইল্যান্ড এখন পর্যন্ত এই অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তের পুরোনো ভূখণ্ড বিরোধ। দুই দেশের মধ্যে শতবর্ষের পুরনো সীমান্ত জটিলতার সূত্র ধরেই সংঘর্ষ ঘনীভূত হয়েছে।
সীমান্তের অন্তত ১২টি এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবারও বিভিন্ন স্থানে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। থাইল্যান্ড দাবি করেছে, কম্বোডিয়ান বাহিনী দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলবর্তী এক নতুন এলাকায় হামলা চালায়, তবে থাই নৌবাহিনী তাদের প্রতিহত করে।
শুক্রবার থাইল্যান্ড সীমান্তের আটটি জেলায় মার্শাল ল’ জারি করে। তাদের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সতর্ক করে বলেন, “সীমান্ত সংঘাত দ্রুত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।” তিনি জানিয়েছেন, সংঘাতে ভারী অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সেনা ও বেসামরিক মিলিয়ে দুই দেশ মিলিয়ে ৩২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ।
থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে বেসামরিক এলাকায় গোলা ছোড়ার অভিযোগ তুলেছে এবং সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলো থেকে জনগণকে সরিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে, যা বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষতি করে। এই অভিযোগ সম্পর্কে থাইল্যান্ড এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
ব্যাংকক দাবি করেছে, কম্বোডিয়া নজরদারি ড্রোন পাঠানোর মাধ্যমে সংঘাত উসকে দিয়েছে। অন্যদিকে কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছে, আগে হওয়া চুক্তির শর্ত ভেঙে থাই সেনারা সীমান্তের কাছের এক খেমার-হিন্দু মন্দিরের দিকে অগ্রসর হয়, যা থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। আসিয়ানের (দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট) বর্তমান সভাপতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশের মধ্যে সংলাপে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রও থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রতি যুদ্ধবিরতি, বেসামরিকদের সুরক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, “সংঘাতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই।”
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত বিরোধের ইতিহাস প্রায় শত বছর পুরোনো। ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর সীমানা নির্ধারণ ঘিরে এ বিরোধের জন্ম। অতীতেও একাধিকবার এই অঞ্চল সংঘাতের কবলে পড়েছে, প্রাণ গেছে বহু সেনা ও সাধারণ মানুষের।
সর্বশেষ উত্তেজনার সূচনা হয় চলতি বছরের মে মাসে, একটি সীমান্ত সংঘর্ষে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর। সেই থেকেই সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে এবং পরিস্থিতি এখন এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।