২৭ রানে অলআউট ক্যারিবীয়রা, রেকর্ডের পাহাড় ভাঙলো অস্ট্রেলিয়া

ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ধ্বংসাত্মক দিন কমই দেখা গেছে। কিংস্টনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ২৭ রানে অলআউট হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গড়ল টেস্টের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় ইনিংসের রেকর্ড। মিচেল স্টার্ক মাত্র ১৫ বলে পাঁচ উইকেট নিয়ে ভাঙলেন দ্রুততম ফাইভ-ফর-এর ইতিহাস। হ্যাটট্রিক করেছেন স্কট বোল্যান্ড। ব্যাটসম্যানদের জন্য এক বিভীষিকাময় দিন, আর বোলারদের জন্য স্বর্গ—এই টেস্ট মনে থাকবে বহুদিন।
২৭ রানে অলআউট—ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বনিম্ন, টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয়
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে মাত্র ২৭ রানে, যা টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দলীয় ইনিংস। কেবল ১৯৫৫ সালে নিউজিল্যান্ডের ২৬ রানের ইনিংস রয়েছে এর নিচে। এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিজের ইতিহাসেও সর্বনিম্ন, আগের রেকর্ড ছিল ২০০৪ সালে একই ভেন্যুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৭।
দুই ইনিংসে মাত্র ১৭০ রান—ওয়েস্ট ইন্ডিজের যৌথ ব্যর্থতার নজির
ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করতে পেরেছে মাত্র ১৭০ রান, যা কোনো পূর্ণাঙ্গ টেস্টে তাদের সর্বনিম্ন সম্মিলিত স্কোর। আগের সর্বনিম্ন ছিল ১৭৫, ১৯৫৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
মাত্র ১৪.৩ ওভারেই ইনিংস শেষ—তৃতীয় দ্রুততম অলআউট ইনিংস
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১৪.৩ ওভার। এটি টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় দ্রুততম অলআউট ইনিংস। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯২৪ সালে ১২.৩ ওভারে (৩০ রান) এবং শ্রীলঙ্কা ২০২৪ সালে ১৩.৫ ওভারে (৩২ রান) অলআউট হয়েছিল।
৭টি ডাক—এক ইনিংসে সর্বোচ্চ শূন্য রানের রেকর্ড
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসে ৭ জন ব্যাটার শূন্য রানে আউট হন, যা টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার ঘটল। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ছয়টি ডাক, তা ঘটেছে মোট ৯ বার। সর্বশেষ ঘটেছিল এ মাসের শুরুতে এজবাস্টনে।
১৫ বলে পাঁচ উইকেট—স্টার্কের ঝড়ে ইতিহাস গড়া স্পেল
মিচেল স্টার্ক মাত্র ১৫ বলেই পাঁচ উইকেট তুলে নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে। এটি পুরুষদের টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল ১৯ বলে—যা যৌথভাবে ছিল স্টুয়ার্ট ব্রড (২০১৫), স্কট বোল্যান্ড (২০২১), ও আরনি তোশাকের (১৯৪৭)।
বোল্যান্ডের হ্যাটট্রিক—১৩ বছর পর অজি হ্যাটট্রিক
স্কট বোল্যান্ড এই ম্যাচে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করেছেন, যা অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে ১০ম হ্যাটট্রিক। সবশেষ হ্যাটট্রিক এসেছিল ২০১০ সালে পিটার সিডলের হাত ধরে। অস্ট্রেলিয়ার মোট টেস্ট হ্যাটট্রিক এখন ১২টি, যা কেবল ইংল্যান্ডের (১৫) পরে।
স্টার্কের ১০০তম টেস্টে সেরা বোলিং ফিগার
স্টার্কের ইনিংস ফিগার ছিল ৬/৯, যা এখন ১০০তম টেস্টে খেলা কোনো ক্রিকেটারের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স। আগের রেকর্ড ছিল মুরালিধরনের, ২০০৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে (৬/৫৪)।
৪০০ উইকেটের মাইলফলক—দ্রুততমদের তালিকায় দ্বিতীয়
এই ম্যাচেই মিচেল স্টার্ক স্পর্শ করেন ৪০০ উইকেটের মাইলফলক। এর জন্য তার লেগেছে ১৯,০৬২টি বল, যা তাকে দ্বিতীয় দ্রুততম (বলসংখ্যায়) বোলার বানিয়েছে এই মাইলফলকে। দ্রুততম ছিলেন ডেল স্টেইন (১৬,৬৩৪ বল)।
ব্যাটিং ব্যর্থতা চূড়ান্ত—শীর্ষ ছয় ব্যাটারের সম্মিলিত রান মাত্র ৬
ওয়েস্ট ইন্ডিজের শীর্ষ ছয় ব্যাটার মিলিয়ে করেছেন মাত্র ৬ রান, যা টেস্ট ইতিহাসে কোনো দলের টপ সিক্স ব্যাটারের সর্বনিম্ন সম্মিলিত রান। আগের রেকর্ড ছিল ১২ রান (অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড, ১৮৮৮)।
কোনো ফিফটি ছাড়াই ম্যাচ শেষ—মাত্র ১৬ বার ঘটেছে ইতিহাসে
ম্যাচজুড়ে কেউই ফিফটি করতে পারেননি। সর্বোচ্চ স্কোর ছিল স্টিভ স্মিথের ৪৮। টেস্ট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬ বার এমন ঘটেছে যেখানে দুই ইনিংস সম্পূর্ণ হওয়া ম্যাচে কোনো ব্যাটার ফিফটি করতে পারেননি।
ম্যাচে মোট রান ৫১৬, বল ১০৪৫—এক শতাব্দীর মধ্যে সর্বনিম্নদের তালিকায়
এই ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে মোট রান হয়েছে ৫১৬, যা টেস্ট ইতিহাসে সপ্তম সর্বনিম্ন। পাশাপাশি ১০৪৫ বলেই ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে, যা ১৯১০ সালের পর চার ইনিংসের টেস্টে সর্বনিম্ন বল ব্যবহারে শেষ হওয়া ম্যাচ।
প্রথম ওভারেই ধস—স্টার্ক নিলেন তিন উইকেট
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস শুরু হয় ০/৩ স্কোরলাইন দিয়ে, স্টার্কের প্রথম ওভারে তিন উইকেট পড়ে। ২০০৬ সালের পর এই প্রথম টেস্টে প্রথম ওভারে তিন উইকেট পড়ল। উল্লেখযোগ্যভাবে, স্টার্ক ২০১৫ সালেও এই একই ভেন্যুতে প্রথম ওভারে দুই উইকেট নিয়েছিলেন।
এটি ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম নাটকীয় এবং ধ্বংসাত্মক টেস্ট ম্যাচ। বোলারদের রাজত্ব, ব্যাটারদের ব্যর্থতা আর রেকর্ডের বন্যায় ভেসে যাওয়া এই ম্যাচ কিংস্টন থেকে লেখা হলো টেস্ট ইতিহাসের এক চরমতম অধ্যায়।