গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা না পাকস্থলী ক্যানসার?
গ্যাস্ট্রিক—রোজকার সাধারণ এক স্বাস্থ্য সমস্যা। বুক জ্বালাপোড়া, পেটে ফাঁপার মতো সমস্যাগুলো দেখা দিলেই আমরা মনে করি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়েছে। হজমজনিত সমস্যা কমাতে ঝটপট ওষুধ খাই। কিন্তু এটিই কি সমাধান? দীর্ঘদিন হজমের সমস্যা চলতে থাকলে এক পর্যায়ে তা পাকস্থলী ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
পৃথিবীতে যত রকম ক্যানসারে মৃত্যু হয়, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে পাকস্থলী ক্যানসার। এটি এমন একটি রোগ যার উপসর্গ সহজে বোঝা যায় না। এর উপসর্গগুলো হজমজনিত সমস্যার সঙ্গে মিলে যায়। তাই মানুষ অতটা পাত্তা দেন না। এতেই বাড়ে বিপদের আশঙ্কা।
পাকস্থলী ক্যানসার মূলত পাকস্থলির দেওয়ালে তৈরি হওয়া ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। যথাসময়ে ধরা পড়লে এই ক্যানসারের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হওয়া সম্ভব বলে জানাচ্ছে একাধিক গবেষণা। কিন্তু বেশিরভাগ লোক গ্যাস্ট্রিকের সাধারণ সমস্যা ভেবে এগুলো এড়িয়ে যান।
এই ব্যাপারে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। বিশেষ করে পরিবারের কারো যদি ক্যানসার হওয়ার ইতিহাস থাকে, তাহলে এসব উপসর্গকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোন লক্ষণগুলো দেখা দিলে সচেতন হবেন জানুন-
১. সকালের দিকে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি:
ব্রিটেনের ক্যানসার রিসার্চ সংস্থা ‘ক্যানসার রিসার্চ ইউকে’ এর তথ্য অনুযায়ী, পাকস্থলী ক্যানসারের একটি লক্ষণ হলো পেটে ব্যথা। বিশেষ করে সকালের দিকে ঘুম থেকে ওঠার পরেই যদি পেটে ব্যথা বোধ হয় কিংবা অস্বস্তি লাগে বা পেটের ওপরের ভাগে যদি এক ধরনের জ্বালাভাব হতে থাকে তাহলে সাবধান হোন। ওষুধ খেয়েও যদি এই সমস্যা না সারতে চায়, তবে সতর্ক হওয়া উচিত।
২. গা গোলোনো এবং বমি ভাব:
সাধারণ হজমের সমস্যাতেও এমন উপসর্গ দেখা যেতে পারে। কিন্তু ওই উপসর্গ কি সকালের দিকেও হচ্ছে? তাহলে চিন্তার বিষয়। প্রায়ই যদি গা গুলিয়ে বমি আসে এবং বমির সঙ্গে রক্ত আসে বা তাতে যদি কফির গুঁড়োর মতো কোনো পদার্থ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. খিদা না থাকা:
অনেক সময় খাবার হজমের পথ আটকে দেয় টিউমার। পাকস্থলীতে খাবার যাওয়ার পরে, তা প্রসারিত হয়। টিউমার থাকলে সে কাজটি সহজে হতে দেয় না। ফলে খিদাবোধ চলে যায়। পেট সবসময় ভরে আছে বলে মনে হয়। না খাওয়ার ফলে দ্রুত ওজনও কমতে থাকে। হঠাৎ ক্ষুদামন্দা দেখা দিলে সাবধান হোন।
৪. পেট অস্বাভাবিক ফুলে যাওয়া:
যাদের গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা পেপটিক আলসার রয়েছে তাদের রোগের উপসর্গের সঙ্গেও পাকস্থলি ক্যানসারের উপসর্গ মিলতে পারে। এমনটাই বলছে মিলানের ডিপার্টমেন্ট অফ ক্লিনিক্যাল সায়েন্সের গবেষণা। ‘ওয়ার্ল্ড জার্নাল অফ গ্যাস্ট্রোএনট্রোলজি’তে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, খাবার খাওয়ার পরেই যদি পেট ফাঁপার সমস্যা হয়, তাহলে তা পাকস্থলী ক্যানসারেরও উপসর্গ হতে পারে।
৫. পায়খানার সঙ্গে রক্ত:
পায়খানা বা মলের রং থেকেও রোগ সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যায়। পায়খানার রং যদি প্রায়ই কালো হয় বা তাতে যদি রক্ত দেখা যায় তাহলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হতে পারে এটি পাকস্থলী ক্যানসারের লক্ষণ।
পাকস্থলী ক্যানসারের উপসর্গগুলোকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়বে। চিকিৎসা সহজ হবে।





