ডলি বেগমের বিজয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে আনন্দ-উচ্ছ্বাস
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ডলি বেগমের টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ে গোটা বাংলাদেশি কমিউনিটি আনন্দে ভাসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডলি বেগমের ছবিসহ শুভেচ্ছা বার্তায় সয়লাব। এই একটি জায়গায় দলমত নির্বিশেষে, আঞ্চলিকতার ঊর্দ্ধে থেকে কানাডার বাংলাদেশিরা ঐকমত্য প্রকাশ করার নজির স্থাপন করলো।
কানাডার অন্টারিও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এনডিপি) মনোনীত প্রার্থী হিসেবে স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্ট আসন থেকে আবারও জয়ী হয়েছেন ডলি বেগম। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪২.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে নিজের শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করেছেন।
ডলি বেগমের এই ধারাবাহিক বিজয় তার জনপ্রিয়তা, নেতৃত্বের দক্ষতা এবং কমিউনিটির প্রতি তার প্রতিশ্রুতির স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্টের বাসিন্দারা তার প্রতি আবারও আস্থা রেখেছেন, যা তার প্রতি জনগণের গভীর বিশ্বাস এবং তার কার্যকর নেতৃত্বের সুস্পষ্ট প্রতিফলন।
ডলি বেগম: এক অনন্য নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি
ডলি বেগম কানাডার রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম নারী যিনি একাধিকবার প্রাদেশিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মূলত শিক্ষানুরাগী এবং সামাজিক উন্নয়নে নিবেদিত এক কর্মী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ থেকে পরিবারের সঙ্গে অভিবাসী হিসেবে কানাডায় আসার পর তিনি শিক্ষাজীবনে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেন। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি জনসেবা এবং নীতি নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত হন।
রাজনৈতিক ও সামাজিক অবদান
ডলি বেগম তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন একজন সামাজিক কর্মী হিসেবে। তিনি ‘মেট্রো টরন্টো মুভমেন্ট ফর লিটারেসি’তে কাজ করেছেন, যেখানে তিনি কমিউনিটির শিক্ষা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ‘সিসিজে (Centre for City Ecology)’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন, যেখানে তিনি ন্যায্য আবাসন, পরিবহন এবং অভিবাসী নীতির উন্নয়নে কাজ করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি প্রথমবারের মতো স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্ট আসন থেকে নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে ২০২২ এবং ২০২৫ সালে পুনরায় বিজয়ী হন।
নির্বাচনী প্রচার ও কমিউনিটির সাড়া
ডলি বেগমের এবারের নির্বাচনী প্রচারণা ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত ও জনসম্পৃক্ত। কমিউনিটির বিভিন্ন স্তরের মানুষ, বিশেষ করে অভিবাসী ও শ্রমজীবী জনগোষ্ঠী তার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখিয়েছে। তার প্রচারণায় মূলত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, আবাসন সংকট নিরসন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো উঠে আসে। তার নেতৃত্বে স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্টে ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে, যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা খাতের উন্নয়ন, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়তা এবং কমিউনিটির জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা।
বাংলাদেশি কমিউনিটির গর্ব
ডলি বেগমের এই বিজয়ে শুধু স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্ট নয়, সমগ্র কানাডার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাকে একজন দক্ষ ও দায়িত্বশীল নেত্রী হিসেবে দেখেন, যিনি অভিবাসী সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা এবং উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তার এই অবদান শুধু বাংলাদেশি কমিউনিটিই নয়, বৃহত্তর কানাডিয়ান সমাজেও প্রশংসিত হয়েছে।
ডলি বেগম তার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আগামীতেও কমিউনিটির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তার এই ধারাবাহিক সাফল্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণদের জন্য রাজনীতিতে অংশগ্রহণের নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে।





