পিলখানা হত্যাকাণ্ড, বিস্ফোরক আইনের মামলায় জামিন শুনানি আজ

আলোচিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় সাবেক বিডিআর সদস্যদের জামিন শুনানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) কেরানীগঞ্জ কারাগারের অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইবুন্যাল-২ এর বিচারক ইব্রাহীম মিয়ার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জামিন শুনানি শেষে আসামিদের জামিনে মুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এদিন বেলা ১১টার কিছুক্ষণ আগে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
এদিকে জামিন শুনানি শেষে মুক্তির অপেক্ষায় এখনো জামিন না পাওয়া তিন শতাধিক বিডিআর সদস্যের পরিবারের স্বজনরা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছেন। সকাল সাড়ে ৯টার পর কড়া পাহারায় আদালতে আনা হয় বিডিআর সদস্যদের।
এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারি দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিস্ফোরক আইনের মামলায় জামিন পান ১৬৮ বিডিআর সদস্য।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদরদপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়।
হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। যেখানে ১৫২ জনের ফাঁসি ছাড়াও ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় দেন হাইকোর্টে। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। একই সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। পাশাপাশি আরও ২২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। আর খালাস পান ২৮৩ জন।
তবে হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। ফলে হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
এদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এ মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এ হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় দিয়েছে সরকার।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ শে ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়।
এর চার বছর পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতে হত্যা মামলাটির রায় হয়। এখনো পর্যন্ত এ মামলাটিতেই দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক আসামি।
এ মামলায় ৮৫০ জন বিডিআর সদস্যের বিচার হয়। তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ১৫২ জনকে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ১৬০ জনকে, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পান ২৫৬ জন। বিচারিক আদালতের ওই রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। আর মামলার রায় হওয়ার আগেই মারা গেছেন চারজন। রায় ঘোষণার পর মারা যান আরও ১১ জন।