বাজেটে তামাক কর ও দাম বাড়ানোর দাবি
তামাকের ব্যবহার নির্ধারিত এবং নিয়ন্ত্রণে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে তামাকবিরোধী যুব সমাজ। সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ইয়ুথ কনফারেন্স ফর টোবাকো ফ্রি বাংলাদেশ’ বক্তারা এ প্রস্তাব করেন।
এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য (এনবিআর), ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে কর বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি। তবে বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য এবং তামাক কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ। ফলে তরুণ ছেলে-মেয়েদের তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা যাচ্ছে না। তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সব ধরনের সিগারেটের দাম বৃদ্ধি, নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক খুচরা মূল্যের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ করা এবং সিগারেটে বহুস্তর বিশিষ্ট অ্যাডভ্যালোরেম কর পদ্ধতির পরিবর্তে ইউনিফর্ম স্পেসিফিক বা মিক্সড (স্পেসিফিক ও অ্যাডভ্যালোরেম) কর পদ্ধতি প্রচলনের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে, পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকেও এর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।
তামাকের ব্যবহার নির্ধারিত এবং নিয়ন্ত্রণে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে তামাকবিরোধী যুব সমাজ। সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আরিফ আহমেদ বলেন, সুস্থ-সমৃদ্ধ দেশের জন্য ধূমপানমুক্ত সমাজ দরকার। আজকের তরুণরাই আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে তামাকপণ্যের কর এবং দাম বৃদ্ধি করার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে- তামাক সেবনের ফলে প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে সরাসরি তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যায় ৭১ লাখ মানুষ এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যায় প্রায় ৯ লাখ মানুষ। অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৩-১৫ বছরের শিশুদের মধ্যে (গ্লোবাল ইয়ুথ ট্যোবাকো সার্ভে-২০১৩) শতকরা ৬.৯ শতাংশ কোনো না কোনো ধরনের তামাক ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা শতকরা ৯.২ শতাংশ এবং মেয়েদের সংখ্যা শতকরা ২.৮ শতাংশ। আমাদের লক্ষ্যে হতে হবে এই শতকরার পরিমাণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা।
তামাকপণ্যের অতিরিক্ত কর বাড়িয়ে এই লক্ষ্যে আমরা অচিরেই পৌঁছাতে পারি। তাই আমি বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকপণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর বর্ধিত করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য।
এন্টি টোব্যাকো ক্লাবের ইয়ুথ লিডার গোলাম মোরশেদ বলেন, তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ধরনের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেড়ে যায়। তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে এবং আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখতে তামাকপণ্যের কর বৃদ্ধি এবং এর দাম বৃদ্ধি করার কোনো বিকল্প পথ আমাদের হাতে খোলা নেই।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এন্টি টোব্যাকো ক্লাবের সদস্য এবং ডা. বরিষা পাল প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।