সিসিক’র ২ হাজার ৫শ’ ৯ কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের একমাসের মাথায় বাতিল হল সিলেট সিটি করপোরেশনের ২ হাজার ৫শ’ ৯ কোটি টাকার জনগুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভায় প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবুহেনা মোরশেদ জামান এই তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
এর কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে সরকার পতন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ, ও চলমান সংস্কার কার্যক্রমের জন্য প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। বাতিল হওয়া প্রকল্পটির মধ্যে ছিল সিটি করপোরেশনের এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ,বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন। মূল প্রস্তাবিত প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২ শ ২৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর একনেকে উক্ত প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ থেকে ২০২৩ ইংরেজী পর্যন্ত নির্ধারন করে দেওয়া হয়। এই প্রকল্পে সিসিকের নিজস্ব অর্থায়ন ছিলো ২৫০ কোটি টাকা।
পরবর্তীতে বর্ধিত ওয়ার্ড সহ অন্যান্য খাতে কাজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনুমোদিত ১২২৮ কোটি টাকার সাথে আরো ৩৮ কোটি টাকা যোগ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করলে প্রকল্প বৃদ্ধি পেয়ে ১২৬৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। পাশাপাশি আরো ১ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৪ পযর্ন্ত করা হয়। আলোচ্য প্রকল্পে সিসিক ২য় সংশোধনী প্রস্তাব প্রেরণ করলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় যাচাই বাছাই ও উপযুক্ততা নির্ণয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনে একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে মন্ত্রণালয়। প্রতিনিধি দল প্রকল্পের পূর্বে অনুমোদিত ১২৬৬ কোটি টাকার সাথে আরো ২৭২৫ কোটি টাকা চাহিদা নির্ণয় করে। এতে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় মোট ৩৯৯২ কোটি টাকায়। যেখানে সিসিকের নিজস্ব ব্যয় ২৫০ কোটি টাকা ধরা হয় এবং মেয়াদ আরো ৩ বছর বৃদ্ধি করে ২০২৪ সাল থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ২য় সংশোধনী প্রস্তাব হিসেবে অনুমোদনের জন্য দাখিল করা হয়। চলতি বছরের মে মাসের ৩ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত প্রতিনিধিদল চাহিদা নিরুপন করে; সরেজমিন প্রতিবেদনে ৩৯৯২ কোটি টাকা থেকে আরো ২০৬ কোটি টাকা কমিয়ে ৩৭৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর মধ্যে ৫ আগষ্ট সরকারের পতন হলে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। উল্লেখ্য, মূল প্রকল্পের প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে সিসিক সূত্রে জানা যায়।
প্রকল্পের মধ্যে ছিলো সিলেট সিটি করপোরেশনের এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন। মূল প্রস্তাবিত প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২ শ ২৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর একনেকে উক্ত প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নির্ধারন করে দেওয়া হয়।
বর্ধিত ওয়ার্ডসহ অন্যান্য খাতে অর্থের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনুমোদিত ১২২৮ কোটি টাকার ১ম সংশোধনী প্রস্তাব হিসেবে আরো ৩৮ কোটি টাকা যোগ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় প্রেরণ করা হয়। ১২২৮ কোটি টাকার প্রকল্প বৃদ্ধি পেয়ে ১২৬৬ কোটি টাকার ১ম সংশোধনী প্রস্তাবটিও অনুমোদিত হয়। পাশাপাশি আরো ১ বছর কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৪ পর্যন্ত করা হয়। প্রকল্পটি মূলত সিলেট সিটি করপোরেশন ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করণ উন্নয়ন কার্যক্রমের গুনগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল।
২য় সংশোধনী প্রস্তাবনায় যেসব কাজ অর্ন্তভুক্ত কর হয় তা মূলত সিলেট সিটিকর্পোরেশনের আয়তন ২০০ গুন বৃদ্ধি পেয়ে ২৬.৫ বর্গকিলোমিটার থেকে ৭৯,৫ বর্গকিলোমিটারে উর্ত্তীনহয়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজ জানান, প্রকল্প অনুমোদন না পাওয়ায় নতুন এলাকার নাগরিকদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন একটু বিলম্বিত হবে। আমরা আশা করেছিলাম কিছু বরাদ্দ হয়তো দেয়া হবে।
কিন্তু কোন বরাদ্দ অনুমোদিত না হয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি বাতিল হওয়ায় নতুন ওয়ার্ডের নাগরিকরা আশাহত হয়েছেন।
নতুন করে প্রকল্প প্রনয়ণ ও তা বাস্তবায়ন অনেক সময় সাপেক্ষ বিষয়। সম্প্রসারিত ওয়ার্ড গুলোতে নাগরিক সেবা পুরোপুরি নিশ্চিত না করে তাদের কাছ থেকে কোন প্রকার কর আদায় করা যাচ্ছে না। রাজস্ব খাতে এটি একটি সমস্যা ।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী জানান, এটি তিন বছর আগের প্রকল্প। আমরা এর সম্প্রসারণ চেয়েছিলাম। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে আমরা আরো অনেক কাজ করাতে পারতাম।
সিলেট একটি পর্যটন অধ্যুষিত এলাকা। তাছাড়া অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সিলেটে বন্যার প্রবণতা বেশি।
বন্যায় সিলেটের রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও অনেক বেশি। ২০২২ সাল থেকে দফায় দফায় বন্যার কারণে নদীভাঙ্গন থেকে শুরু করে বিভিন্ন অবকাঠামো নষ্ট হওয়ায় ক্ষয় ক্ষতির পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে।
নতুনভাবে ১৫ টি ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ায় মানুষের চাহিদাও বেড়েছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্ট করেছি কিছু পরিমান বরাদ্দ যাতে পাই। তবে আবারো নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রেরণের কাজ চলছে।
পিএসসি যুগ্মসচিব’র নেতৃত্বে গঠিত আইএমইডি ও পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধিসহ ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সরেজমিন প্রতিবেদনকে কোন প্রকার পাত্তা না দিয়ে শুধু মাত্র রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারন দেখিয়ে ০৫ সেপ্টেম্বর জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি বাতিল করা হয়।
সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মেয়রের দায়িত্বে থাকা কালে ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় মূল প্রকল্প অনুমোদিত হয়।
পরবর্তীতে মেয়রের দায়িত্বে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী থাকাকালে তা ২য় সংশোধনী প্রকল্প প্রস্তাব হিসেবে ২৭২৫ কোটি টাকা থেকে ২০৬ কোটি টাকা হ্রাস করে ২৫১৯ কোটি টাকায় বাস্তবায়নের জন্য যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে আইএমইডি ও পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধিসহ ৫ সদস্যবিশিষ্ট গঠিত কমিটি ২০২৪ সালের মে মাসে সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক, স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রতিবেদন দাখিল করেন। সুত্র: দৈনিক শ্যামল