তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ করেছেন মির্জা ফখরুল
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন জানিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া রায় বাতিল চেয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন করেছেন। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের ওই রায় দিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল প্রমুখ। এই মামলার শুনানির জন্য বিশেষভাবে আইনজীবী শিশির মনিরকে নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে তিনিও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১১ সালের ১০ জুন তৎকালীন আপিল বিভাগ ০৪: ০৩ কণ্ঠ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেন। ফলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন রাজনৈতিক সরকারের অধীন নজিরবিহীন কারচুপির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির কাঁধে ফ্যাসিবাদ জেঁকে বসে। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। মানুষ মুক্তি পায়। দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি বলেন, ১৯৯১ সালে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীন পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়। বিএনপি সরকার জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন যথাক্রমে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। ২০১১ সালের ১০ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে সংক্ষিপ্ত আদেশ ঘোষণা করেন। সংক্ষিপ্ত আদেশের ভিত্তিতে সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই তৎকালীন সংসদ তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করে এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ পরিবর্তন করা হয়, যা বিচার বিভাগীয় প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।
জয়নুল আবেদীন জানান, ৪১ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আদালতে প্রকাশ্যে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ সংবিধান সংশোধনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দেয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের অবসরের ১৮ মাস পর রায় প্রকাশ করে বিচার বিভাগীয় প্রতারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি ফৌজদারি মামলা চলমান। গণতন্ত্র ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন যমজ সন্তানের মতো, একটি ছাড়া আরেকটি অর্থহীন। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্রহণযোগ্য বাহন। এই রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ ধ্বংস করা হয়েছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল। সময়ের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে এর কার্যকারিতা থাকে না বলে মন্তব্য করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব সংবিধানকে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করা, যান্ত্রিকভাবে নয়। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে এই রায় পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।