১৯১ রানে আউট মুশফিকুর রহিম
আজই সুযোগ ছিল সুনিল গাভাস্কার, জহির আব্বাস, হাশিম আমলা, মোহাম্মদ ইউসুফদের কাতারে চলে যাওয়ার। কিংবদন্তি এই ব্যাটারদের টেস্টে আছে ৪টি করে ডাবল সেঞ্চুরি। মুশফিকুর রহিম আজ একদম সেই রেকর্ডের দোরগোড়ায় চলে এসেছিলেন।
হলো না। মাত্র ৯ রানের জন্য ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরিটা করতে পারলেন না মুশফিক। ১৯১ রান করে মোহাম্মদ আলিকে স্কয়ার কাট খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হয়ে ফিরলেন টাইগার এই ব্যাটার।
৩৪১ বলের ম্যারাথন ইনিংসে ২২টি চার আর একটি ছক্কা হাঁকান মুশফিক। মুশফিক আর মিরাজ সপ্তম উইকেটে গড়েন ১৯৬ রানের জুটি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ৫২৯ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ ৬৫ আর হাসান মাহমুদ শূন্য রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের লিড ৮১ রানের।
রাওয়ালপিন্ডির উইকেট পুরোপুরি ব্যাটিং বান্ধব। পাকিস্তানি বোলারদের সর্বশক্তিকে ঠিকই বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে সক্ষম হচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন সাদমান ইসলাম। ৭ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন তিনি।
তবে, সাদমানের মত ভুল আর করলেন না মুশফিকুর রহিম। ১১৬তম ওভারের তৃতীয় বলে আগা সালমানকে লেগ সাইডে ঠেলে দিয়েই দুই রান নেন তিনি। সে সঙ্গে পূরণ করে ফেলেন ক্যারিয়ারের ১১তম টেস্ট সেঞ্চুরি। ২০০ বলে পৌঁছান তিন অংকের ঘরে।
চার হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয়দিনই শক্ত জবাব দিয়েছিলো পাকিস্তানি বোলারদের। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ৫ উইকেটে ৩১৬। উইকেটে থাকা মুশফিকুর রহিম এবং লিটন দাস- দু’জনই করেছিলেন হাফ সেঞ্চুরি।
আজ তৃতীয় দিন বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় শুরু হয় খেলা। ৫৫ রান নিয়ে মুশফিকুর রহিম এবং ৫২ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামেন লিটন দাস।
তবে নিজের ইনিংসটাকে খুব বেশি আগাতে পারলেন না লিটন। ব্যক্তিগত ৫৬ রানে আউট হয়ে গেলেন নাসিম শাহের বলে উইকেটের পেছনে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে। দলীয় রান ছিল এ সময় ৩২। ১১৪ রানের জুটি গড়েন লিটন এবং মুশফিক।
এর আগে একটুর জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন সাদমান ইসলাম। ক্যারিয়ারে সবশেষ টেস্ট খেলেছিলেন ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ২০২২ সালের মার্চে। সে টেস্টে দুই ইনিংসেই দশের নিচে আউট হন সাদমান। একটি ছিল ডাক। এরপর দলে জায়গা হারান বাঁহাতি এই ওপেনার।
মাহমুদুল হাসান জয়ের চোটে দীর্ঘ আড়াই বছর পর টেস্ট দলে ফিরলেন। ফিরেই দারুণ এক ইনিংস খেললেন। কিন্তু তাতে মিশে রইলো আক্ষেপ। মাত্র ৭ রানের জন্য যে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা করতে পারলেন না সাদমান।
পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আলির দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন সাদমান। ১৮৩ বলে তার ৯৩ রানের ইনিংসে ছিল ১২টি বাউন্ডারির মার।
নানামুখী সমালোচনার মুখে পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে খেলতে নেমেছেন সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে দেশে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও হয়েছে আওয়ামী লীদের সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।
এতসব চাপ নিয়ে ব্যাটিংয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি সাকিব। ১৬ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৫ রান করেই সাজঘরে ফেরেন দেশসেরা অলরাউন্ডার। এর আগে বল হাতেও মাত্র একটি উইকেট নিয়েছিলেন।
সাকিব বরাবরের মতো ব্যাটিংয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলেন। ঠিক টেস্ট মেজাজে শুরু করতে পারেননি। এর আগে মাত্র একটি টেস্ট খেলা মূলত ব্যাটার হিসেবে পরিচিত সাইম আইয়ুব সেই সুযোগটি নিয়েছেন।
সাকিবকে একটু খেলার জায়গা করে দিয়েছেন পার্টটাইমার এই অফস্পিনার। তারই পাতা ফাঁদে পা দিয়ে কভারে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে এসেছেন সাকিব, সফট ডিসমিসাল। সাইম আইয়ুবের টেস্টে এটি প্রথম উইকেট।
বিনা উইকেটে ২৭ রান নিয়ে আজ শুক্রবার তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দিনের শুরুতেই উইকেট হারায় টাইগাররা। নাসিম শাহর করা ১৭তম ওভারের পঞ্চম বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ হন ওপেনার জাকির হাসান (৫৮ বলে ১২)।
পিচে সেট হয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। ৪২টি বল খেলে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের ধৈর্যকে দীর্ঘতর করতে পারলেন না টাইগার অধিনায়ক। ১৬ রান করে খুররম শেহজাদের বলে বোল্ড হন তিনি। ২৭তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৫৩ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মুমিমুল হক আর সাদমান ইসলাম। ৯৪ রানের জুটি গড়েন তারা। দুজনই পান হাফসেঞ্চুরি। মুমিনুল অবশ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৯তম ফিফটি হাঁকানোর পরই সাজঘরে ফেরত যান। পাকিস্তানি পেসার খুররম শেহজাদের বলে বোল্ড হন মুমিনুল, ৭৬ বলে ৫ বাউন্ডারিতে তিনি করেন ৫০ রান।
এর আগে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। ১৭১ রানে অপরাজিত ছিলেন রিজওয়ান। তার সঙ্গে ২৪০ রানের জু্টি করা সৌদ শাকিল করেন ১৪১ রান।