কোটা আন্দোলন নিয়ে স্বস্তিকা মুখার্জীর আবেগঘন স্ট্যাটাস
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তাল সারাদেশ। এক দফা এক দাবিতে রাজপথে শিক্ষার্থীরা। তাই তো জীবন বাজি রেখে কোটা সংস্কার চেয়ে রাস্তায় নেমেছে তারা। চলমান এই ইস্যুতে বেশ সরব দেশের শোবিজ অঙ্গন। কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলনরতদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন করেছেন চলচ্চিত্রশিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ইউটিউবার ইনফ্লুয়েন্সারাসহ সংগীত শিল্পীরা।
এবার কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিলেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি এক দীর্ঘ পোস্ট করেছেন।
পোস্টে স্বস্তিকা লিখেছেন, প্রায় এক মাস হলো আমি নিজের দেশে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খবরের চ্যানেলে তৃতীয় বিশ্বের কোনো খবরই তেমন একটা চলেনা।আর আমি খুব একটা ফোনের পোকা নই তাই এত খারাপ একটা খবর কানে আসতে দেরি হলো। এই তো কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ গেলাম, খুব ইচ্ছে ছিল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার। চারুকলা যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, জীবনের একটা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে।
আন্দোলনের বিষয়ে তার ভাষ্য, ‘প্রতিবার আসি, ব্যস্ততায় যাওয়া হয়না, মা’ও খুব যেতে চাইতেন বাংলাদেশ, নিয়ে যাওয়া হয়নি, কিন্তু আজ একটা ভিডিও দেখলাম, গুলির ধোঁয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আক্রান্ত। ছাত্র বয়স গেছে সেই কবে, তবে জাহাঙ্গীর নগর আর আমার যাদবপুর খুব কাছাকাছি। কাঠগোলাপের গাছ গুলিও কেমন এক রকম। এক রকম আকাশের মেঘ গুলিও। কেবল আজ ওখানে বারুদের গন্ধ।’
গৌতম গুহ রায়ের কবিতার একাংশ লিখেছেন এ অভিনেত্রী
‘ময়দান ভারী হয়ে নামে কুয়াশায়
দিগন্তের দিকে মিলিয়ে যায় রুটমার্চ
তার মাঝখানে পথে পড়ে আছে ও কি কৃষ্ণচূড়া ?
নীচু হয়ে বসে হাতে তুলে নিই
তোমার ছিন্ন শির, তিমির।’
স্বস্তিকা পোস্টের শেষে বলেন, এমন এক আপ্যায়ন প্রিয় জাতি দেখিনি, খাবারের নিমন্ত্রণ যেন শেষ হতেই চায় না, ওমন সুন্দর করে সারা রাস্তা জুড়ে ভাষার আলপনা আর কোথায় দেখবো ? নয়ন জুড়ানো দেওয়াল লেখা? এ বোধহয় মুক্তিযুদ্ধের শপথ নেওয়া একটা জাতির পক্ষেই সম্ভব।
আজ, অস্থির লাগছে। আমিও তো সন্তানের জননী। আশা করবো বাংলাদেশ শান্ত হবে। অনেকটা দূরে আছি, এই প্রার্থনা টুকুই করতে পারি।
অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, সেই আমাদের আলো। আলো হোক, ভাল হোক সকলের ।
উল্লেখ্য, গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকেই আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সেই আন্দোলন এখনো চলছে। বুধবারও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ ৬ জেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।