ইফতারের পর ধূমপান করলে রোজার ক্ষতি হয় কি?
ধূমপানে রোজা ভঙ্গ হয়। তাই রমজানে দিনের বেলায় বিশ্বাসী মুমিন রোজাদার ব্যক্তি ধূমপান করেন না। অনুরূপভাবে যাঁরা বিভিন্নভাবে তামাক সেবন করেন, তাঁরাও রোজা অবস্থায় তা করেন না। সুতরাং, ধূমপায়ী ও তামাকসেবীদের জন্য তা বর্জনের মহাসুযোগ। ধূমপানে বা তামাকে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা এগুলো সেবন ছাড়া দীর্ঘ সময় থাকতে পারেন না; কিন্তু পবিত্র রমজানে তাঁরা আল্লাহর রহমতে ও ইমানের বলে বলীয়ান হয়ে প্রায় ১৬ ঘণ্টা তা পরিহার করে থাকেন এবং রাতের বেলায় তা গ্রহণ করলেও সীমিত মাত্রায় গ্রহণ করেন। অনেকে এমনও আছেন, রমজানের চাঁদ থেকে ঈদের চাঁদ পর্যন্ত পূর্ণ এক মাস ধূমপান ও তামাক সম্পূর্ণ বর্জন করে থাকেন।
ধূমপান করা হারাম। আর যেটা হারাম, সেটা হারামই। যেটা খারাপ, সেটা খারাপই। রোজা রাখা অবস্থায় ধূমপান করলে অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হবে। তবে সেহরিতে বা ইফতারের পর ধূমপান করলে রোজার ক্ষতি হয় না। কিন্তু রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো সংযম এবং হারাম পরিহার করা। সেই উদ্দেশ্য ঠিক থাকে না।
সুতরাং, এটা পরিহার করার জন্য চেষ্টা করতে হবে।। আল্লাহর বান্দা হিসেবে সিয়াম পালন করতে পারছেন এবং এই দীর্ঘ সময় ধূমপান ছাড়াই থাকতে পারছেন, তাহলে বোঝা গেল আপনি এটা অবশ্যই পরিহার করতে পারবেন।
আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্য সিয়াম পালন করছেন। হারাম কাজের মধ্যে নিজেকে জড়িত করে আপনি যতই সামনে দৌড়ান না কেন, আপনি সামনে যেতে পারবেন না। আপনি অগ্রসর হতে পারবেন না, হারাম কাজ আপনাকে পেছনে নিয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, মিথ্যাচার এবং যে গর্হিত বিষয় আছে, সেগুলো পরিহার করতে পারল না, তার সিয়াম শুধু লোক দেখানো হবে। এই সিয়ামের মাধ্যমে আপনি আল্লাহর মূল উদ্দেশ্য পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন না।
এছাড়া শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই এটি সম্পূর্ণ অপচয়ের শামিল। ইসলামি বিধানে অপচয় করা হারাম; অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না; নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই; আর শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (আল কোরআন, সুরা-১৭ [৫০] বনি ইসরাইল আল ইসরা (মাক্কী), রুকু: ৩/৩, আয়াত: ২৬-২৭, হিজব: ২৯ (নিসফ), পারা: সুবহানাল্লাহজি-১৫, পৃষ্ঠা: ২৮৫/৩)। পবিত্র মেরাজ রজনীতে যে ১৪টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রিয় নবীজি (সা.) দান করেছেন, এটি তার অন্যতম। এই মেরাজের রাতেই নামাজ ও রোজা ফরজ হয় এবং অপচয় নিরোধের এই নির্দেশ প্রদান করা হয়। সুতরাং, এই নির্দেশ নামাজ-রোজার মতোই গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দানে যে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোনো আদম সন্তান এক কদমও নড়তে পারবে না: তা হলো: (১) জীবন, (২) যৌবন, (৩) আয়, (৪) ব্যয়, (৫) জ্ঞান। ব্যয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আর তোমরা পানাহার করো; কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (আল কোরআন, সুরা-৭ [৩৯] আল আরাফ (মাক্কী), রুকু: ৩/১০, আয়াত: ৩১, মঞ্জিল: ২, হিজব: ১৬ (রুব), পারা: ওয়া লাও অন্নানা-৮ (সুলুস), পৃষ্ঠা: ১৫৫/১৩)।
ধূমপান ও তামাক সেবনে কারও কারও মনে হতে পারে সাময়িক উপকার হয়; আসলে তা কিন্তু নয়। এর ক্ষতি চরম ও দীর্ঘস্থায়ী এবং বহুমুখী। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও; কিন্তু উহাদের ক্ষতি উপকার অপেক্ষা অধিক।’ (আল কোরআন, সুরা-২ [৮৭] আল বাকারা (মাদানি), রুকু: ২৭/১১, আয়াত: ২১৯, মঞ্জিল: ১, হিজব: ৪ (নিসফ), পারা: সাইয়াকুল-২ (সুলুস), পৃষ্ঠা: ৩৫/১৩)। বাংলাদেশে বিড়ি-সিগারেট ও তামাক ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি আয়কর প্রদান করলেও এই খাত থেকে পাওয়া আয়কর ধূমপান ও তামাকজনিত ক্ষতির চিকিৎসাব্যয়ের দ্বিগুণেরও বেশি।
চএমন কোনো কাজকর্ম, যা নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে ফেলে বা অঙ্গহানি ঘটায় অথবা স্থায়ী ক্ষতি করে, তা সম্পূর্ণরূপে হারাম নিষিদ্ধ ও নাজায়েজ এবং আত্মহত্যার শামিল। কারণ, মানুষ তার নিজের স্রষ্টাও নয়, মালিকও নয়; সবকিছুর মালিক হলেন আল্লাহ তাআলা; আর মানুষ হলো তাঁর আমানতদার বা হেফাজতকারী। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আর তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কোরো না। তোমরা সৎ ও সুন্দর কাজ করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সৎকর্মপরায়ণ লোকেদের ভালোবাসেন। (আল কোরআন, সুরা-২ [৮৭] আল বাকারা (মাদানি), রুকু: ২৪/৮, আয়াত: ১৯৫, মঞ্জিল: ১, হিজব: ৩ (সুলুস), পারা: সাইয়াকুল-২ (নিসফ), পৃষ্ঠা: ৩১/৯)।
নিজের ক্ষতি করার যেমন এখতিয়ার নেই, তেমনি অন্যের ক্ষতি করাও জায়েজ নয়। একজন ধূমপায়ী নিজের ক্ষতির পাশাপাশি আশপাশের অন্যদেরও ক্ষতি করে থাকে, যা সম্পূর্ণ হারাম ও কবিরা গুনাহ। যাঁরা ধূমপান করে বা তামাক সেবন করে, তাদের মুখে ও শরীরে একধরনের উৎকট বিশ্রী দুর্গন্ধ ছড়ায়; যা পাশের মানুষের কষ্টের কারণ হয় এবং তা হারাম ও নাজায়েজ।