বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচকে অবনতি বাংলাদেশের
নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুদলীয় ব্যবস্থা, সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা ২০২৩ সালের বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচকে আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশের দুই ধাপ অবনতি ঘটেছে। বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বের ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) এই সূচক প্রকাশ করেছে।
ওই পাঁচ মানদণ্ড বিবেচনা করে পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, মিশ্র গণতন্ত্র এবং স্বৈরশাসন— এই চার শ্রেণিতে সূচক তৈরি করা হয়েছে। ইকোনমিস্টের মতে, কোনও দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে পূর্ণ গণতন্ত্র, ৬ থেকে ৮ হলে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৪ থেকে ৬ হলে মিশ্র গণতন্ত্র এবং ৪ এর নিচে হলে সেই দেশে স্বৈরশাসন জারি রয়েছে।
২০২৩ সালের সূচকে ৫ দশমিক ৮৭ স্কোর নিয়ে ৭৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। ইআইইউ সূচকের মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে মিশ্র গণতন্ত্র রয়েছে।
এর আগে ২০২২, ২০২১ ও ২০২০ সালে এই সূচকে ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে মিশ্র গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। একই সূচকে ২০১৯ সালে ৮৮তম স্থানে বাংলাদেশর স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৫৭।
২০২৩ সালের ইআইইউ-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরটি বিশ্বজুড়ে ‘‘গণতন্ত্রের জন্য একটি অশুভ বছর’’ ছিল। ২০০৬ সালে সূচক প্রকাশ শুরু হওয়ার পর থেকে গত বছরই বৈশ্বিক গড় স্কোর সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বে গণতন্ত্রের জন্য একটি সুসংবাদ আছে। আর সেটি হলো ২০২৩ সালে বিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা দুটি বেড়ে ৭৪-এ পৌঁছেছে। তবে সূচকের অন্যান্য মাপকাঠিতে গত বছরটি বৈশ্বিক গণতন্ত্রের জন্য শুভ ছিল না। বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকের গড় স্কোর কমে ৫ দশমিক ২৩ হয়েছে; যা ২০২২ সালে ৫.২৯ ছিল।
এছাড়া সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা কোনও না কোনও ধাঁচের গণতন্ত্রে বাস করে। যা প্রায় ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করা মানুষের সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এই সংখ্যা ২০১৫ সালের ৮ দশমিক ৯ শতাংশের তুলনায় কম। আর বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি বাস করে মিশ্র গণতান্ত্রিক শাসনের অধীনে (৩৯.৪ শতাংশ)।
২০২৩ সালের ইআইইউ-র এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৭ দশমিক ৪১ স্কোর নিয়ে শীর্ষে আছে ভারত। দেশটির অবস্থান ২০২২ সালে ৪৬তম স্থানে থাকলেও গত বছর ৪১তম স্থানে উঠে এসেছে। ১৬৫ দেশের এই তালিকায় ৩ দশমিক ২৫ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান আছে ১১৮তম স্থানে। গত বছরের তুলনায় এই সূচকে ১৪ ধাপ অবনতি ঘটেছে পাকিস্তানের। শ্রীলঙ্কা ৬ দশমিক ১৭ স্কোর নিয়ে ৭০ তম অবস্থানে আছে। গত বছর দেশটির ৬৭তম স্থানে থাকলেও এ বছর অবনতি ঘটেছে। গত বছরের মতো ৫ দশমিক ৫৪ স্কোর নিয়ে ভুটান ৮১তম স্থানে আছে। গত বছরও একই অবস্থানে ছিল দেশটি। আর গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ উন্নতিতে নেপাল ৯৮তম স্থানে উঠে এসেছে। দেশটির স্কোর ৪ দশমিক ৬০।
এদিকে এবারের এই সূচকে ৯ দশমিক ৮১ স্কোর নিয়ে গত বারের মতো সবার ওপরে আছে নরওয়ে। নিউজিল্যান্ড ২০২২ সালের মতো এবারের সূচকে দ্বিতীয় স্থানে আছে। দেশটির স্কোর ৯ দশমিক ৬১। ৯ দশমিক ৪৫ স্কোর নিয়ে ফিনল্যান্ড আছে তৃতীয় স্থানে। এরপরই আছে ৯ দশমিক ৩৯ স্কোর নিয়ে সুইডেন (চতুর্থ), পঞ্চম স্থানে ফিনল্যান্ড (স্কোর ৯.৩০), ৬ষ্ঠ স্থানে ডেনমার্ক (স্কোর ৯.২৮), ৭ম স্থানে আয়ারল্যান্ড (স্কোর ৯.১৯), ৮ম সুইজারল্যান্ডস (স্কোর ৮.৯৯), নেদারল্যান্ডস নবম (স্কোর ৯.০০) এবং তাইওয়ান ৮.৯২ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে আছে।
অন্যদিকে এবারের এই তালিকার গত বছরের মতো একেবারে তলানিতে জায়গা করে নিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। স্বৈরশাসকের অধীনে থাকা মিয়ানমার ১৬৬তম স্থানে আছে। দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ৮৫। এ ছাড়া বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন কোরীয় দ্বীপের উত্তর কোরিয়া ১ দশমিক ০৮ স্কোর নিয়ে ১৬৫তম স্থানে আছে।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচক প্রকাশ করে ব্রিটিশ এই সাময়িকী । ওই বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। প্রথম গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায়। র পরের বছর গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে বাংলাদেশ মিশ্র গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় ঢুকে যায়। তখন থেকেই ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিউটের বিচারে মিশ্র গণতন্ত্রের দেশ রয়েছে বাংলাদেশ।





