শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত
এশিয়া কাপের সুপার ফোরে প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া ভারত-শ্রীলঙ্কার সামনে আজ ফাইনাল নিশ্চিতের হাতছানি। দুই দলের যে জিতবে সেই এক পা দিয়ে রাখবে ফাইনালে। এমন সমীকরণে টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আগে ব্যাট করতে নেমে ভালো সূচনা পেয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু মিডেল ওভারে লঙ্কান স্পিনার দুনিথ ওয়েল্লালাগে ও চারিথ আসালাঙ্কার ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে যায় কোহলিদের ব্যাটিং অর্ডার। শেষ পর্যন্ত ৪৯.১ ওভারে ২১৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় রোহিত শর্মার দল। ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতীয় বোলারদের তোপে ১৭২ রানে অলআউট হয়ে যায় দাসুন শানাকার দল। ফলে ৪১ রানের জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার হয়ে রান তাড়া করতে নামেন পাথুম নিশাঙ্কা ও দিমুথ করুণারত্নে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই সাফল্যের দেখা পায় ভারত। জাসপ্রিত বুমরাহর বলে ৬ রানে আউট হন নিশাঙ্কা। এরপর ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কুশল মেন্ডিস ও দিমুথ করুণারত্নেও। এই দুই ব্যাটার ১৫ ও ২ রানে সাজঘরে ফিরেছেন। ২৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদের মুখে পড়ে লঙ্কানরা।
সেখান থেকে দলের হাল ধরেন চারিথ আসালঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। দুজনে ধীরে ধীরে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। তবে জুটি খুব বড় হতে দেননি কুলদীপ যাদব। ১৭ রান করা সামারা বিক্রমাকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। নিজের পরের ওভারে আরেক সেট ব্যাটার আসালঙ্কাকে ফেরান কুলদীপ। ২২ রান করেন তিনি। লংকানদের বিপদ আরো বাড়ে যখন মাত্র ৯ রান করে রবীন্দ্র জাদেজার বলে ফেরেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা।
দলীয় শতকের আগে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে যায় শ্রীলঙ্কা। তবে সেখান থেকে পাল্টা প্রতিরোধ গড়েছেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা ও ওয়েল্লালাগে। তাদের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে লঙ্কানরা। তবে দলীয় ১৬২ রানে ডি সিলভা আউট হলে ভাঙে ৬৩ রানের জুটি। ৬৬ বলে ৪১ করেন তিনি। শেষ দিকে দুনিথ ওয়েল্লালাগে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ভারতীয় বোলারদের তোপে ১৭২ রানে থামে লঙ্কানদের ইনিংস।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ভারতীয় ওপেনার। রোহিত শর্মা ও শুভমন গিলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দশ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৫ রান তুলে ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে অর্ধশতক পাওয়া দুই ব্যাটার বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তবে ইনিংসের ১২তম ওভারে লঙ্কান শিবিরে স্বস্তি এনে দেন দুনিথ ওয়েল্লালাগে। গিলকে এই বাঁহাতি স্পিনার বোকা বানিয়ে বোল্ড আউট করে সাজঘরের পথ দেখান। এরপর ক্রিজে নেমে তরুণ এই লঙ্কান স্পিনারের জালে আটকা পড়েন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বিরাট কোহলি।
কলম্বোতে সমর্থকদের ১৬তম ওভারে আরো বড় আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন ২০ বছর বয়সী এই তরুণ। তার ঘূর্ণি জালে আটকা পড়েন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাও। দলীয় ৮০ রানে শূন্য উইকেট থেকে ৯১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন আগের ম্যাচের আরেক সেঞ্চুরিয়ান লোকেশ রাহুল। এই ডানহাতি ব্যাটার সঙ্গী হিসেবে পান ইশান কিশানকে।
এই জুটিতে যখন প্রতিরোধের আভাস দেয় সফরকারীরা তখনও শ্রীলঙ্কার ত্রাতা হয়ে আসেন ভেল্লালাগে। এবার তিনি ফাঁদে ফেলেন রাহুলকে। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে রাহুল নিজের চতুর্থ শিকার বানান লঙ্কান বোলার। ফেরার আগে রাহুল করেন ৪৪ বলে ৩৯ রান। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া আরেক ব্যাটার ইশানকে ফাঁদে ফেলেন আসালাঙ্কা। ৪৪ বলে ৩৯ রান করেন ইশান।
নিয়মিত ব্যাটারদের হারিয়ে এরপর শুধু হতাশাই দেখে ভারত। ভরসা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি হার্দিক পান্ডিয়াও। তাঁকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রথমবার পাঁচ উইকেট নেওয়ার উল্লাসে ভাসেন ভেল্লালাগে। ১৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটাই তার প্রথম ফাইফার। শেষ দিকে বোলাররা চেষ্টা করলেও বড় লক্ষ্য জমা করতে পারেননি ভারতের স্কোরবোর্ডে। শেষ পর্যন্ত ২১৩ রানে থামতে হয় রোহিত শর্মার দলকে। শ্রীলঙ্কার হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন ওয়েল্লালাগে।