বিশ্বের প্রভাবশালী নেতাদের কোন খাবার, জেনে নিন
নানা উপায়ে একজন বিশ্বনেতার মনোজগৎ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। খাবার হিসেবে তাঁরা কী খেয়ে থাকেন, কোন খাবার, কোন পানীয়, কোন মিষ্টান্ন (ডেজার্ট) তাঁদের পছন্দ– এ সবের মধ্য দিয়েও একজন ব্যক্তিমানুষ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
বাইডেনের হাতের নাগালে যেসব খাবার থাকতেই হয়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স ৮০। একধরনের ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। মার্চ মাসে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীর থেকে ক্ষতিকর টিস্যু অপসারণ করা হয়েছে। তবে আগে থেকেই স্বল্পাহারী বাইডেন। স্যুপ ও সালাদ দিয়ে দুপুরের খাবার সারেন। আর রাতের খাবার হলো মারিনারা সস দিয়ে পাস্তা। মারিনারা সস একধরনের টমেটো সস, বানানো হয় টমেটো, রসুন, ভেষজ ও পেঁয়াজ দিয়ে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটনের মানুষ। বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই তিনি ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দা। সেখানে বিভিন্ন দেশের রেস্তোরাঁয় তাঁর যাওয়া হয়। তবে সাধারণত ইতালীয় খাবার বা পিৎজা অর্ডার করে থাকেন। বাইডেনের হাতের নাগালে কেচাপ, পিনাট বাটার, জেলি, স্লাইসড চিজ, অরেঞ্জ গেটোরেড থাকতেই হবে। বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল দুজনেরই নানা ব্র্যান্ডের আইসক্রিম বিশেষ পছন্দের। বিশেষ করে ওহিও অঙ্গরাজ্যের রাজধানী কলম্বাসের জেনি’স এসপ্লেনডিড আইসক্রিম দোকানটিতে তাঁরা ঢুঁ মেরে থাকেন।
পুতিনের পছন্দ টমেটো, শসা আর লেটুস
টেস্টিংটেবিল ডটকম জানাচ্ছে, আইসক্রিম পছন্দ করা কোনো বিশ্বনেতার নাম যদি বলতে হয়, তবে সবার আগে আসবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কথা। এমনিতে জীবনচচর্চায় কঠোর নিয়মশৃঙ্খলার জন্য পরিচিত তিনি। পুতিনের সকালটা শুরু হয় একটু দেরিতে। কারণ, তিনি বেশ রাত অবধি কাজ করেন। সকালে উঠে ভারোত্তোলন করতে করতে রাশিয়ার খবরগুলো দেখা, এরপর দুই ঘণ্টা সাঁতার তাঁর প্রাত্যহিক রুটিন। নাশতার পরে তিনি কফি ও জুস পান করেন। রন্ধনবিষয়ক লেখিকা আনিয়া ফন ব্রেমজেন জানাচ্ছেন, তীব্র ঠান্ডার মধ্যেও পুতিন আইসক্রিম খেয়ে থাকেন। তাঁর প্রিয় ফ্লেবার হলো পিসটাশিও। ২০১৯ সালে রাশিয়া সফরকালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে তিনি আইসক্রিম দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন, এমন তথ্য অনেকেরই জানা। ওই বছরই জন্মদিনের উপহার হিসেবে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে আইসক্রিম পাঠিয়েছিলেন।
তবে সকাল-দুপুর-রাতে ভারী খাবার হিসেবে পুতিন কী খেয়ে থাকেন, তা জানা যায় না। এটা একেবারেই গোপনীয় বিষয়। এ বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা প্রাভদা কিছুটা ইঙ্গিত দিয়ে জানায়, বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক পুতিনের খাবারের তালিকায় টমেটো, শসা ও লেটুসের আধিক্য থাকে। কেফির নামে দুধের তৈরি একটি পানীয় তাঁর বিশেষ পছন্দ। রুশ প্রেসিডেন্ট সাধারণত অ্যালকোহল ও মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন।
স্ত্রীর পছন্দের বাইরে যান না মাখোঁ
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বলতে গেলে দুটির বেশি শব্দ খরচ করার প্রয়োজন পড়ে না। তা হলো খাবার অবশ্যই ফরাসি হতে হবে। ম্যাশড ডটকম জানাচ্ছে, ২০১৭ সালে এলিসি প্রাসাদের প্রধান পাঁচক একবার তথ্য প্রকাশ করেন, প্রেসিডেন্টের খাবার টেবিলে ফরাসি ছাড়া অন্য কোনো খাবার পরিবেশন করা হয় না। ব্যতিক্রম বলতে শুধু কফি। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হলো ফলমূল, শাকসবজি ও দুগ্ধজাত খাবার। আর মাখোঁর নিজের পছন্দের খাবারটি হলো কর্ডন ব্লিউ। এটি ব্রেড ও চিজ দিয়ে মোড়ানো একটা মাংসের পদ। সে মাংস হতে হবে কচি বাছুর বা শূকরের। গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, খাবারের ব্যাপারে মাখোঁর স্ত্রী ব্রিজিতের কড়াকড়ি রয়েছে।
এর বাইরে ফরাসি প্রেসিডেন্টের পছন্দ কেবল ওয়াইন। তাঁর ভাঁড়ারে ওয়াইনের বোতলের সংখ্যা অন্তত ১৪ হাজার। বলার অপেক্ষা রাখে না, সব ওয়াইনই ফরাসি সুবাসিত। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো সতের্ন নামে যে ওয়াইনটি, সেটি বানানো হয় ১৯০৬ সালে।
ট্রুডোর পছন্দ এশীয় খাবার
২০১৫ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর জাস্টিন ট্রুডোর ব্যক্তিগত অনেক বিষয় সামনে আসে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন আগে ওই বছরই হাফিংটন পোস্টের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পছন্দের খাবার নিয়ে কথা বলেন ট্রুডো। তিনি কখনো কফি পান করেন না। পছন্দ করেন এশীয় খাবার। আর ওয়াইনের বদলে তাঁর পছন্দ বিয়ার। মন্ট্রিলের সাকুরা গার্ডেন তাঁর প্রিয় রেস্তোরাঁ। সাকুরা গার্ডেন একটি জাপানি রেস্তোরাঁ, যেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। প্রতিষ্ঠাতা নরিকো ইশি, যিনি ছিলেন একজন পাঁচক।
২০১৯ সালে ‘প্রেস গ্যালারি ডিনারে’ ট্রুডো বলেন, সুশি তাঁর প্রিয় খাবার। তিনি এটাও বলেন, চায়নিজ খাবার তাঁর অনেক পছন্দ। তাঁর এই বক্তব্য কৌতুকের মতো শোনালেও তেমন বিতর্কের জন্ম দেয়নি। কারণ, অনেকেই জানেন সুশি জাপানি খাবার হলেও এর শিকড় চীনের মাটিতেই প্রোথিত।
কিশিদার পছন্দ ওকোনোমিয়াকি
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ততটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন না। কিন্তু ২০২১ সালে নির্বাচনের রাতে টুইটারে খাবারের একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন তিনি। ছবিটিতে সাড়ে তিন লাখ লাইক পড়ে। ছবিটি দিয়ে কিশিদা লেখেন, ‘যখন আমি বাসায় থাকি, আমার স্ত্রী আমার জন্য ওকোনোমিয়াকি তৈরি করেন। কারণ, খাবারটি আমি পছন্দ করি।’
ওকোনোমিয়াকি একটা সুস্বাদু প্যানকেক। এটি তৈরি করার প্রধান দুটি উপাদান হলো বাঁধাকপি ও আটা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ডিম ও শূকরের মাংস। ভাজার পর কেকের ওপরে হালকা মিষ্টি সস দেওয়া হয়। তবে ওসাকা, হিরোশিমাসহ স্থানভেদে খাবারটি তৈরির উপকরণের রকমফের ঘটে।
হিরোশিমায় জন্ম নেওয়া কিশিদার বাবাও এলডিপির নেতা ছিলেন। কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যুক্তরাষ্ট্রে। কিশিদার স্কুলজীবন কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রেই। তবে তাঁর পশ্চিমা কোনো পছন্দের খাবারের কথা বিশেষ জানা যায় না।
সন্ধ্যার পরে ভারী কিছু খান না দালাই লামা
বেশির ভাগ মানুষ যখন সকালে ঘুম থেকে ওঠেন, তার আগেই দালাই লামার নাশতা করা হয়ে যায়। সকালে তিনি পরিজ, ব্রেড, চা ও সামপা খেয়ে থাকেন। বার্লির সঙ্গে ইয়াকের দুধ মিশিয়ে তৈরি করা হয় সামপা। সাধারণত সন্ধ্যার পরে ভারী কিছু খান না তিব্বতের এই আধ্যাত্মিক নেতা। দুপুরে খেয়ে থাকেন নুডলস স্যুপ। এই খাবারের বড় ভক্ত তিনি। সন্ধ্যায় পান করেন কেবল চা।
দালাই লামা ১৯৫৯ সালেই নিরামিষ খাবার বেছে নেন। কারণ, বৌদ্ধধর্মের বিশ্বাসমতে প্রাণী হত্যা মহাপাপ। কিন্তু পুরোপুরি নিরামিষাশী হিসেবে তিনি টিকতে পারেন মাত্র ২০ মাস। এরপরই তিনি হেপাটাইটিস ও গলব্লাডারের রোগে আক্রান্ত হন। তখন চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে আবার মাংস খাওয়া শুরু করতে হয়। ২০১০ সালে এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দালাই লামা বলেন, সপ্তাহে খুব কম সময়ই তিনি মাংস খেয়ে থাকেন। বেশির ভাগ সময়ই তিনি নিরামিষ খাবার খান।
দালাই লামা একবার নিউজ কমেডিয়ান জন অলিভারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মঙ্গোলিয়া থেকে অ্যালকোহল হটাতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। সেটা গত শতকের নব্বই দশকের কথা। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেল। প্রতিবেশী দেশগুলোতে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট। মঙ্গোলিয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেল ২৫০ শতাংশের ওপরে। মঙ্গোলিয়ানরা তবু রাশিয়ান ভদকা ছাড়ে না। তখন তিনি তাদের ভদকা ছেড়ে ঘোড়ার দুধ পানের পরামর্শ দিলেন। এটা তারা গ্রহণ করল।
প্রকৃতপক্ষে দালাই লামা তাদের এইরাগ নামে একটি পানীয় পানের পরামর্শ দিয়েছিলেন। ঘোড়ার দুধ থেকে তৈরি এই পানীয় মধ্য এশিয়ার যাযাবরেরা শত শত বছর ধরে পান করে আসছে। এর মধ্যেও অ্যালকোহলের উপাদান আছে, তবে ভদকার মতো ততটা তীব্র নয়। ভদকার মধ্যে যেখানে অ্যালকোহলের উপাদান ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ, এইরাগে তা মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ।
কিম জং–উনের চিজ আসে সুইজারল্যান্ড থেকে
উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং–উন ব্যক্তিগত অনেক কিছু গোপন রাখলেও পছন্দের খাবারের কথা সব সময় খোলাসা করেছেন। সাধারণত উত্তর কোরীয়রা ভাত, কিমচি (বিভিন্ন শাকসবজি দিয়ে তৈরি একটি পদ), তফু, সবজি খেলেও কিম জং-উন তা পছন্দ করেন না। বিদেশি খাবারই তাঁর পছন্দ। তাঁর পছন্দের একটি খাবারের নাম ইমেনটাল। হলুদ রঙের এ চিজ আসে সুইজারল্যান্ড থেকে। এর বাইরে সুশি এবং টুনা মাছের চর্বিবহুল পেটের অংশ দিয়ে তৈরি একধরনের রোল তাঁর পছন্দ।
পানীয়র ক্ষেত্রে ব্রাজিলিয়ান কফি কিম জং-উনের বিশেষ পছন্দ। অ্যালকোহলযুক্ত কিছু পানীয়ও যে তাঁর পছন্দ, সে কথা তিনি কখনো গোপন করেননি। তাঁর পছন্দের পানীয়র মধ্যে রয়েছে রুশ ভদকা, ক্রিস্টাল শ্যাম্পেন, হেনেশি কগন্যাক ও বর্ডিয়াক্স ওয়াইন।