লন্ডন থেকে সিলেট : আনোয়ারুজ্জামানের চমক

মাত্র তিন মাস দেশে অবস্থান করে বাঘা বাঘা প্রার্থীদের পেছনে ফেলে সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাগিয়ে নিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক প্রবাসী নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। শনিবার (১৫ এপ্রিল) তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ১০ জন নেতা। তাঁরা হলেন- যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহানগর ইউনিট শাখা সিলেটের ডেপুটি কমান্ডার, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, যুগ্ম-সম্পাদক এটিএমএ হাসান জেবুল, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম।
সম্ভাব্য মনোনয়ন নিয়ে গৃহবিবাদ তুঙ্গে উঠলে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মনোনয়ন যুদ্ধে যোগ দেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। কেন্দ্রের পরামর্শে লন্ডন থেকে তিন-চার মাস আগে দেশে এসে প্রচার শুরু করেন তিনি। তাঁর প্রার্থিতার ঘোষণায় পাল্টে যায় মাঠের হিসাব-নিকাশ। কেন্দ্রের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েই তিনি মাঠে নেমেছেন বলে জানান। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব থাকলেও ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়ান তিনি। এরপর কেন্দ্র যখন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আহ্বান করে, তখন তিনিসহ প্রায় এক ডজন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন।
গত কয়েকদিন ধরে মহানগরের নেতাকর্মীদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চলছিল- কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন? কাকে বেছে নিচ্ছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা? সেই জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শনিবার কেন্দ্র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে চূড়ান্ত করে। তাঁর মনোনয়নকে দলীয় সভানেত্রীর চমক হিসেবেই দেখছেন নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলীয় গৃহবিবাদ এড়াতে লন্ডনে বসবাসরত শেখ রেহানার ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত আনোয়ারুজ্জামানকে চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। একটু কঠিন হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মন জয় করেই নির্বাচন করতে হবে তাকে। আর বিএনপি নেতা ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে না এলে মেয়র হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে যাবেন তিনি।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমার ব্যক্তিগতভাবে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি। দলীয় নেতৃবৃন্দসহ সকলের সহযোগিতায় সিলেটকে একটি পরিচ্ছন্ন, স্মার্ট নগরী হিসেবে সিটি গড়ে তুলতে চাই।
প্রসঙ্গত, ছাত্রজীবনে বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তার পৈত্রিক বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগরে। যুক্তরাজ্য যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছিলেন। তবে তাতে সফল হতে পারেননি।