সেই লিটনকে সিলেটের নাট্যাঙ্গনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
শিশু ও নারীর প্রতি যৌন হয়রানি এবং হেনস্থা করার অভিযোগে সম্মিলিত নাট্য পরিষদের জরুরি সভায় সাংস্কৃতিক সংগঠক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটনকে সিলেটের নাট্যাঙ্গনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার (১০ এপ্রিল) রাত দশটায় সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের মহড়া কক্ষে নাট্য পরিষদের নীতিনির্ধারণী পরিষদের আহ্বানে জরুরি সাংগঠনিক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠক, কথাকলি সিলেটের সদস্য আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন পোর্টাল ও সংবাদমাধ্যমে শিশু ও নারীর প্রতি যৌন হেনস্থা ও কুরুচিপূর্ণ আচরণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর অডিও ক্লিপ প্রকাশ হওয়ায় সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটনকে সর্বসম্মতিক্রমে নাট্যাঙ্গনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন। অন্যতম পরিচালক অর্ধেন্দু কুমার দাশ এর পরিচালনায় সভায় সদস্য সংগঠন সমুহের লিখিত প্রস্তাব পর্যালোচনার মাধ্যমে নাট্যকর্মীদের সুরক্ষায় বিশেষ সেল ও ভিকটিম সাপোর্ট কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন এর বিষয়ে কথাকলি সিলেট এর লিখিত জবাব নাট্য পরিষদের কাছে সন্তোষজনক না হওয়ায় তাদেরকে পরবর্তী চিঠি প্রাপ্তির ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন বিষয়ে সন্তোষজনক সুস্পষ্ট জবাব ও গঠনতান্ত্রিক মোতাবেক কেনো সংগঠনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ হবে না তা জানতে চেয়ে চিঠি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
সভায় সিলেটের নাট্যাঙ্গনকে সর্বাবস্থায় গতিশীল ও সকল নাট্যকর্মীদের জন্য নিরাপদ ক্ষেত্র তৈরি করে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আগামীতে আরও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
সভায় সম্মিলিত নাট্য পরিষদভুক্ত সদস্য সংগঠন সমুহের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তব্য রাখেন,পরিষদের অন্যতম পরিচালক অনুপ কুমার দেব, সাবেক পরিচালক ও নান্দিক নাট্যদলের প্রতিনিধি কনোজ চক্রবর্তী বুলবুল, সাবেক সভাপতি নিরঞ্জন দে যাদু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কথাকলি সিলেট এর সভাপতি শামসুল বাসিত শেরো, সাবেক সহসভাপতি খোয়াজ রহিম সবুজ, কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, উদীচী সিলেট এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. অভিজিৎ দাস জয়, সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল মিন্টু, দর্পণ থিয়েটার এর সাধারণ সম্পাদক নাহিদ পারভেজ বাবু, নাট্যায়ন সিলেট এর সাধারণ সম্পাদক এখলাছ আহমেদ তন্ময়, দিগন্ত থিয়েটারের দিবাকর সরকার শেখর, নবশিখা নাট্য দলের সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি দে, লিটল থিয়েটার, সিলেটের প্রতিনিধি দেবাশীষ দেবু, থিয়েটার সিলেটের প্রতিনিধি কামরুল হক জুয়েল, ফারজানা সুমি, দিগন্ত থিয়েটার প্রতিনিধি কামরুন নাহার শাওন, নগরনাটের প্রতিনিধি উজ্জ্বল চক্রবর্তী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটনের বিরুদ্ধে একাধিক যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। যা সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়। একইসাথে একাধিক নারীর সঙ্গে মুঠোফোনের আলাপে দায় স্বীকারও করেন লিটন। এ অবস্থার মধ্যে শনিবার রাতে সভাপতির পদ থেকে আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটনকে অব্যাহতি দেয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট। আর সর্বশেষ তাকে সিলেটের নাট্যাঙ্গনে অবাঞ্চিত ঘোষণা করলো সিলেটের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের চালিকাশক্তি ‘সম্মিলিত নাট্য পরিষদ’।