আরও অনেক কাজে লাগবে মোবাইল ফোন
মোবাইল ফোনের সমস্যা হলো মানুষ এতে খুব বেশি সময় কাটায়।’ ৫০ বছর আগে যিনি মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেছিলেন, কথাটা তাঁরই।
তিনি হলেন, মার্কিন প্রকৌশলী মার্টিন কুপার। তাঁকে মোবাইলফোনের জনক বলা হয়। তিনি বলেন, আমাদের সবার পকেটে যে ছোট্ট যন্ত্রটি রয়েছে, সেটির সম্ভাবনা অসীম। একদিন এ যন্ত্র দিয়ে রোগ নিরাময়ও সম্ভব।
তবে এখন মানুষ মোবাইল ফোন নিয়ে কিছুটা আসক্ত হয়ে পড়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেলমারে নিজের কার্যালয় থেকে ৯৪ বছরের এই প্রকৌশলী বলেন, ‘আমি খুবই বিমর্ষ হয়ে যাই যখন দেখি, কেউ মুঠোফোনের দিকে তাকিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে।’ তিনি মজা করে আরও বলেন, কিছু লোক গাড়ির ধাক্কা খাওয়ার পর হয়তো ঘটনাটি বুঝতে পারবে।
কুপার একটি অ্যাপল ওয়াচ পরেছিলেন। তিনি আইফোন ব্যবহার করেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ভালোবাসেন কুপার। তারপরও তিনি বলেছেন, ‘আমার নাতি–নাতনিরা কীভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে, আমি কখনোই তা বুঝতে পারব না।’
কুপার এখন যে আইফোন ব্যবহার করেন, সেটি ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল ব্যবহার করা মোবাইল ফোনের চেয়ে অনেক আলাদা। সে সময় কুপার মটোরোলার হয়ে কাজ করতেন। মুঠোফোন তৈরির প্রকল্পে সে সময় প্রতিষ্ঠানটি কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বেল সিস্টেমকে প্রতিযোগিতায় হারানো। ১৮৭৭ সালের পর এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিকম প্রতিষ্ঠানে বেল সিস্টেমের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল।
বেলের প্রকৌশলীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেলুলার ফোন নিয়ে ভাবনা শুরু করেন। ১৯৬০ সালের শেষ দিকে গাড়িতে এ ধরনের ফোনের ব্যবহার শুরু হয়। তবে এটি আংশিকভাবে করা হয়। কারণ, এ কাজে প্রচুর ব্যাটারি খরচ হতো।
১৯৭২ সালের শেষ দিকে কুপার এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন, যেটি যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করা যাবে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ শুরু। কুপার ও তাঁর দল ওই বছরের মার্চের শেষ দিকে ডায়না ট্যাক-ডায়নামিক অ্যাডাপটিভ টোটাল এরিয়া কভারেজ ফোন আবিষ্কার করেন। এ ধরনের ফোনগুলোর ওজন ছিল এক কেজির বেশি। এসব ফোনে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হতো, তা দিয়ে মাত্র ২৫ মিনিট কথা বলা যেত। কুপার বলেন, ‘সমস্যা আসলে সেটা ছিল না। এই ফোনগুলো এত বেশি ভারী ছিল যে, ২৫ মিনিটের বেশি হাতে ধরে রাখা যেত না।’
কুপার এই ফোনে প্রথম ফোন করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী দ্য বেল সিস্টেমের ড. জোয়েল এঙ্গেলকে। ফোনে কুপার বলেছিলেন, ‘জোয়েল, আমি মার্টিন কুপার…আমি আপনার সঙ্গে হাতে মুঠোফোনে কথা বলছি। এ ফোন ব্যক্তিগত, বহনযোগ্য ও হাতে ব্যবহারযোগ্য।’
ফোনের ওপাশে তখন ছিল নীরবতা। কুপারের ধারণা, ওপাশে জোয়েল হয়তো রাগে দাঁত কিড়মিড় করছিলেন।
প্রথম দিকের সেই মোবাইল ফোন মোটেও সস্তা ছিল না। কুপার বলেন, একেকটি ফোনের দাম পড়ত পাঁচ হাজার ডলার।
কুপার বলেন, ‘মোবাইল ফোন এখন বহু কাজে আসে। আমরা কেবল শুরু করেছিলাম। শুরুটা ছিল এই ফোন কী করতে পারে, তা দিয়ে।’
ভবিষ্যতে মোবাইল ফোন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বিপ্লব ঘটাবে বলে কুপার আশা করেন। হয়তো অতিরঞ্জন হতে পারে, তবে এক বা দুই প্রজন্মের মধ্যে মোবাইল ফোন দিয়ে রোগ নিরাময় সম্ভব বলে জনান কুপার।
বিষয়টিকে কুপার ব্যাখ্যা করেন এভাবে, সাঁতার কাটার সময় অ্যাপল ওয়াচ তাঁর হৃৎস্পন্দন গুনতে পারে। তাঁর শ্রবণযন্ত্রের নজরদারি করতে পারে। সেভাবে মোবাইল ফোনেও এমন সেন্সর থাকবে, যাতে শরীরের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়বে। রোগ হওয়ার আগে শরীরের অসুস্থতা ধরা পড়বে।
শুরুর দিকেই কুপার জানতেন, একদিন সবার হাতে হাতে এই ফোন থাকবে। তিনি বলেন, আর এখন সেই সময় চলে এসেছে। কুপার আরও বলেন, ‘আজকের বিশ্বে মানুষের সংখ্যার চেয়ে মোবাইল ফোনের গ্রাহকের সংখ্যা বেশি। তাই আমাদের স্বপ্নের একটা অংশ সত্য হয়ে গেছে।’
কুপার আরও বলেন, সমস্যা হলো মানুষ মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তবে এ নিয়েও কুপার খুব বেশি চিন্তিত নন। তিনি বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তির সামনে সব সময়ই চ্যালেঞ্জ থাকে। যখন প্রথম টেলিভিশন এল, তখন মানুষ আসক্ত হয়ে পড়েছিল। তবে এখন আমরা বুঝতে পেরেছি, টিভি দেখার নির্দিষ্ট সময় ও ব্যবস্থাপনা রয়েছে।’
কুপার বলেন, ‘এখন আমরা অনেকটা সময় মুঠোফোনে কাটাচ্ছি। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। প্রতিটি প্রজন্ম আরও বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে, মোবাইল ফোনের ব্যবহার কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়।
মানুষ হয়তো শিগগিরই বা আর কিছুদিন পরই মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবে।