ছাতকের লায়েক হত্যায় রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানীর অভিযোগ
ছাতক পৌর এলাকার মন্ডলীভোগ গ্রামের লায়েক হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদেরকে মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার (০৪ মার্চ) বিকেলে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা এবং ছাতক পৌর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাতক পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও ছাতক পৌরসভার প্রথম মেয়র আব্দুল ওয়াহিদ মজনু।
বক্তব্যে বলা হয়, এ হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মদদে আয়োজিত মানববন্ধনে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে জড়িয়ে প্রতিহিংসামূলক ও মানহানীকর মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত ২৮ মার্চ দিবাগত রাতে তারাবি নামাজ চলাকালীন সময়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে স্থানীয় গণেশপুর খেয়াঘাট এলাকায় প্রতিপক্ষ একজনের উপর্যপুরি ছুরিকাঘাতে মন্ডলীভোগ গ্রামের লায়েক মিয়া আহত হয় এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায়। পরদিন বিষয়টি স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক পত্রিকা ছাড়াও কোন কোন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় পুলিশ প্রশাসন, নিহত লায়েকের মা ও স্বজনদের বক্তব্যসহ বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে ঘাতকের পরিচয় সহ ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে দেশবাসী অবহিত হন। যার প্রেক্ষিতে চিহ্নিত ঘাতকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সকলেই আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু ঘটনার ৩ দিন পর নিহত লায়েকের ভাই আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে ছাতক থানায় যে মামলা দায়ের করেছেন তাতে সত্য ঘটনাকে আড়াল করে এমনকি মূল অভিযুক্তের সাথে ছাতক পৌর আওয়ামী লীগের উদিয়মান নেতা সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের ভ্রাতুষ্পুত্র ইশতিয়াক রহমান তানভীর, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পরপর ৫ বার নির্বাচিত কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র তাপস চৌধুরী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক সাদমান মাহমুদ সানী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলা উদ্দিনসহ কতিপয় নিরপরাধ ব্যক্তিকে মিথ্যা বয়ানে আসামী করায় ছাতক-দোয়ারা বাজারের বিবেকবান সকল মানুষকে হতবাক করেছে।
আব্দুল ওয়াহিদ মজনু বলেন, মামলার বাদী তার ভাইয়ের হত্যাকারীর শাস্তি নিশ্চিত করার পথে না গিয়ে ছাতকের একটি চিহ্নিত গোষ্ঠীর ক্রীড়নক হয়ে তাদের চাহিদা মতো নিরপরাধ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং গ্রামবাসীকে মিথ্যা বয়ানে আসামী করে লায়েক হত্যার ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার যে অপচেষ্টা করেছেন তা অত্যন্ত গর্হিত এবং নিন্দনীয়।
সংবাদ সম্মেলনে এই হীন অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। একইসাথে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে নিরপরাধ এসব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও গ্রামবাসীকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ারও জোর দাবী জানান নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক উড়ে এসে জুড়ে বসা কেউ নন। প্রধানমন্ত্রী জননেন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পরপর ৭ বার নমিনেশন দিয়েছেন এবং ৫ বার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ধরে রেখে মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা সম্পর্কে সকলেই কমবেশি ওয়াকিবহাল। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দলীয় মনোনয়ন ও নিশ্চিত বিজয়কে বাধাগ্রস্ত করতে ছাতকের চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার অতীতের মতো বর্তমানেও নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। যার অংশ হিসেবে গত ১লা এপ্রিল এই গোষ্ঠী লায়েক হত্যার বিচার দাবীর নামে লোক জড়ো করে লায়েকের হত্যা কান্ড সম্পর্কে তেমন কোন বক্তব্য না দিয়ে মুহিবুর রহমান মানিক এমপিকে জড়িয়ে মানহানীকর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সংসদ সদস্যের উজ্জল রাজনৈতিক ভাবমূর্তিকে কলুষিত করার অপচেষ্টা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভবিষ্যতে এই গোষ্ঠীর অনুরূপ যেকোন কাজ ছাতক দোয়ারাবাজারবাসীকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, লাশ নিয়ে রাজনীতি করার একাধিক নজির ছাতকের স্বাধীনতা বিরোধী এই পরিবারের রয়েছে। ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ, আওয়ামী লীগ কর্মী মৈশাপুর গ্রামের ফারুক এবং ঠেলাগাড়ি ড্রাইভার সাহাব উদ্দিন হত্যাকান্ডের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টার কথা ছাতকের মানুষ এখনো ভুলে যায়নি। আমাদের স্থির বিশ্বাস চিহ্নিত গোষ্ঠী যতই চেষ্টা করুক লায়েক হত্যাকান্ডের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে কোনো ফায়দা হাসিল করতে পারবে না। এ বিষয়ে সকলের সজাগ দৃষ্টি থাকলে সুষ্ঠু তদন্তে প্রকৃত অপরাধী আইনের আওতায় আসবে এবং নিরপরাধীরা মামলার দায় থেকে রেহাই পাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে সকল নিরপরাধী ব্যক্তিগণকে মামলার দায় খেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
এসময় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আলী বীরপ্রতীক, ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান তানভীর আল আশরাফী চৌধুরী বাবু, দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল খালিক, ছাতক পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক চান মিয়া চৌধুরী, ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ আহমদ, আবু সাদাত মো. লাহিন মিয়া ও এড. আশিক আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন তুতা মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন বুলি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির আলী বাদশা, ছাতক উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ প্রমুখ।